উদারনীতিবাদের সংজ্ঞা, বিবর্তন, শ্রেণিবিভাগ এবং বৈশিষ্ট্য
ভূমিকা : উদারনীতি বাদ একটা প্রাচীন মতবাদ। সর্বপ্রথম গ্রিক দার্শনিকদের চিন্তার দুটি দিক 'রাজনৈতিক স্বাধীনতা এবং চিন্তার স্বাধীনতা'র মধ্যে উদারনীতিবাদের আভাস পাওয়া যায়। পরবর্তীকালে সপ্তদশ শতকে উদারনীতিবাদের জন্ম হয় ইংল্যান্ডে। সর্বপ্রথম জন লকের 'Two Treatises On The Civil Government' নামক গ্রন্থে উদার নীতিবাদের উল্লেখ পাওয়া যায়। এই কারণে জন লককে উদারনীতিবাদের জনক বলা হয়।
** উদারনীতিবাদ বলতে কী বোঝায় উদারনীতিবাদ কাকে বলে?
রাষ্ট্রবিজ্ঞানে উদারনীতিবাদের মানে হল রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ববাদের বিরুদ্ধে ব্যক্তিস্বাধীনতার নীতি প্রতিষ্ঠা।
সহজ ভাষায় উদারনীতিবাদ হল এমন একটি স্বাধীন জীবনের কণ্ঠস্বর যা ব্যক্তির চিন্তা, স্বাধীন মতপ্রকাশ ছাড়াও অন্যান্য ক্ষেত্রে সর্বাধিক পরিমাণ স্বাধীনতা দেওয়ার কথা বলে।
'Liberalism' নামক গ্রন্থে হব হাউস বলেছেন, 'উদারনীতিবাদ হলো এমন এক দৃষ্টিভঙ্গি যা সমাজে এমন কতগুলো সামাজিক শর্ত প্রতিষ্ঠা করতে চায়, যেখানে সমস্ত মানুষের ব্যক্তিত্যের সর্বোত্তম বিকাশ ঘটে।
আবার, হ্যারল্ড ল্যাস্কি উদারনীতিবাদ বলতে স্বাধীনতার অনুশাসনকে বুঝিয়েছেন।
সুতরাং, উদারনীতিবাদ হল এমন এক ধরনের মানসিক প্রক্রিয়া যা ব্যক্তির অধিক স্বাধীনতা এবং ব্যক্তিত্বের সর্বাঙ্গীন বিকাশের পক্ষপাতী।
উদারনীতি বাদের শ্রেণিবিভাগ || Classification Of Liberalism
উদারনীতি বাদকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
১) সনাতনী উদারনীতিবাদ বা সাবেকি উদারনীতিবাদ (Classical Liberalism)
২) আধুনিক উদারনীতিবাদ সংশোধন মূলক উদারনীতিবাদ (Revisional Liberalism)
৩) তৃতীয়ত নয়া উদারনীতিবাদ বা সমকালীন উদারনীতি বাদ (Contemporary Or Neo Liberalism)
** দ্বাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ১০০% কমনযোগ্য সাজেশন এবং সম্পূর্ণ সিলেবাসের পিডিএফ নোট খুবই সামান্য দামে পেতে আজই +918388986727 নম্বরে যোগাযোগ করো
▪ সাবেকী উদারনীতিবাদ বা সনাতনী উদারনীতিবাদের বৈশিষ্ট্য (Features Of Classical Liberalism) :
▪ জন লক, জন স্টুয়ার্ট মিল, অ্যাডাম স্মিথ, জেরেমি বেন্থাম প্রমুখ হলেন সনাতন বা সাবেকি উদারনীতিবাদের প্রবক্তা। সনাতম উদারনীতিবাদের প্রবক্তারা এই উদারনীতিবাদের যে বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেছেন, তা হল-
১) প্রাকৃতিক অধিকার সংরক্ষণ ; রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে সাবেকী উদারনীতিবাদে এটা বলা হয়েছে, মানুষ- জীবন, স্বাধীনতা ও সম্পত্তির অর্থাৎ প্রাকৃতিক অধিকারগুলোকে রক্ষার জন্য চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের সৃষ্টি করেছে। তাই রাষ্ট্রের প্রধান কাজ হবে ব্যক্তির জীবন,স্বাধীনতা,সম্পত্তি ও প্রাকৃতিক অধিকার গুলি রক্ষা করা।
২) সর্বাধিক ব্যক্তির সর্বাধিক পরিমাণ সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের ব্যবস্থা করা ; বিখ্যাত ইংরেজ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জেরেমি বেন্থাম তার হিতবাদী দর্শনের মাধ্যমে উদারনীতিবাদকে তিনি আরও প্রসারিত করেছেন। তার মতে রাষ্ট্রের প্রধান কাজ হবে সর্বাধিক ব্যক্তির সর্বাধিক পরিমাণ সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের ব্যবস্থা করা। বেন্থামের মতে একজন ব্যক্তির সর্বাধিক সুখ-শান্তি কী করে আসবে সেটা ঠিক করবে ব্যক্তি; রাষ্ট্র নয়। তাই ব্যক্তিগত কাজে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ করা কখনোই উচিত নয়।
৩) অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ; বিখ্যাত ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম স্মিথ মনে করতেন রাষ্ট্রের প্রধান কাজ হবে ব্যক্তিগত উদ্যোগে হস্তক্ষেপ না করে জনস্বার্থমূলক কার্য সম্পাদন করা ও জনস্বার্থমূলক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা। তিনি মনে করতেন রাষ্ট্রের উচিত অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নাগরিকদের অবাধ স্বাধীনতা প্রদান করা এবং ব্যক্তিগত কাজে হস্তক্ষেপ না করা।
▪ আধুনিক উদারনীতিবাদ বা সংশোধন মূলক উদারনীতিবাদের বৈশিষ্ট্য ;
▪ অধ্যাপক টি.এইচ.গ্রীন, ম্যাক আইভার,হব হাউস, আর্নেস্ট বার্কার হলেন আধুনিক উদারনীতিবাদের প্রবক্তা। তারা আধুনিক উদারনীতি বাদের যে বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেছেন, তা হলো-
১) রাষ্ট্র হল সমষ্টিগত মঙ্গলের প্রকাশ ; অধ্যাপক টি.এইচ.গ্রীনের মতে জনগণের সমষ্টিই হলো রাষ্ট্রের ভিত্তি বল প্রয়োগ নয়। তার মতে রাষ্ট্র কখনোই নিজেই নিজের লক্ষ্য হতে পারে না। রাষ্ট্রের প্রধান লক্ষ্য হবে সকলের মঙ্গল করা। গ্রীন রাষ্ট্রকে ব্যক্তি বিকাশের হাতিয়ার হিসাবে উল্লেখ করেছেন।
২) রাষ্ট্র হল জনগণের সেবক ; ম্যাকাইভার রাষ্ট্রকে জনগণের সেবক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তার মতে রাষ্ট্র জনগণের সেবক বা এজেন্ট হিসেবে কাজ করে বলেই রাষ্ট্রের নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। তিনি রাষ্ট্রের কাজকর্মকে শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা এবং জীবন ও সম্পত্তি রক্ষা- এই কাজগুলোর মধ্যে সীমিত রাখার কথা বলেছেন।
৩) রাষ্ট্রের কাজ হবে সমাজের ব্যাপক অংশের সর্বাধিক কল্যাণ ; ১৯৩৫ সালে প্রকাশিত 'The State In Theory And Practical' নামক গ্রন্থে অধ্যাপক হ্যারল্ড ল্যাস্কি বলেছেন- রাষ্ট্রের প্রধান কাজই হবে সমাজের সর্বাধিক পরিমাণ ব্যক্তির সর্বাধিক পরিমাণ সামাজিক মঙ্গল সাধন করা। এবং সেই মঙ্গল তখনই সাধিত হবে যখন নাগরিকরা সর্বাধিক পরিমাণ স্বাধীনতা ভোগ করবেন।
** দ্বাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ১০০% কমনযোগ্য সাজেশন এবং সম্পূর্ণ সিলেবাসের পিডিএফ নোট খুবই সামান্য দামে পেতে আজই +918388986727 নম্বরে যোগাযোগ করো
▪ সমকালীন বা নয়া উদারনীতিবাদের বৈশিষ্ট্য (Features Of Neo Liberalism) :
▪ রবার্ট নজিক, জন রসল, বার্জেস প্রমুখ নয়া উদারনীতিবাদের প্রবক্তা। সমকালীন বা নয়া উদারনীতিবাদে বৈশিষ্ট্য গুলো দেখা যায় তা হল-
১) ন্যূনতম কর্মসূচি সম্পন্ন রাষ্ট্র ; দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর রাষ্ট্র অতিমাত্রায় ক্ষমতাশালী এবং আমলাতান্ত্রিক হয়ে পড়ে। ফলে ধীরে ধীরে রাষ্ট্র ব্যক্তির প্রতিটি ক্ষেত্রেই রাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করতে শুরু করে। কিন্তু নয়া উদারনীতি বাদীরা এরূপ রাষ্ট্রের পক্ষপাতী নন। নয়া উদারনীতি বাদে অতি ক্ষমতাশালী ও আমলাতান্ত্রিক রাষ্ট্রের বদলে এক নূন্যতম কর্মসূচি সম্পন্ন রাষ্ট্র গঠনের কথা বলা হয় যা ব্যক্তির প্রতিটি ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করবে না।
২) রাষ্ট্রের শুধুমাত্র তিনটি কাজ থাকবে ; নয় উদার নীতিবাদের প্রবক্তাদের মতে রাষ্ট্রের শুধুমাত্র তিনটি কাজ থাকবে। তা হল নিরাপত্তা রক্ষা, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা এবং প্রতিরক্ষামূলক কাজ করা। এছাড়া রাষ্ট্রের আর কোন কাজ থাকতে পারে না।
৩) অবাধ বাণিজ্য নীতি : উদারনীতিবাদীরা মনে করেন,একমাত্র অনিয়ন্ত্রিত বাজার অর্থনীতির প্রাচুর্য ও দক্ষতার মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব।
তাই অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কোনো রকম রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ তারা পছন্দ করেন না। নয়া উদারনীতিবাদের সমর্থকরাও সাবেকি উদারনীতিবাদীদের মতো অবাধ বাণিজ্য নীতির কথা বলেছেন। তাদের কথা- অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রন কাম্য নয়।
৪) অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ; রবার্ট নজিক বলেছেন- নাগরিকদের সম্পত্তি অর্জন,সম্পত্তি ভোগ করা এবং চুক্তির স্বাধীনতা অলঙ্ঘনীয়। তাই রাষ্ট্র কোনভাবেই এ সমস্ত বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে না।
উপসংহার ; পরিশেষে বলা যায়,রাষ্ট্রবিজ্ঞানের তাত্ত্বিক আলোচনায় উদারনীতিবাদের তাৎপর্য কোনো ক্ষেত্রেই অস্বীকার করা যায় না। বর্তমান দুনিয়ায় অর্থনৈতিক শিল্পায়নের প্রেক্ষিতে উদারনীতিবাদের গুরুত্ব ও তাৎপর্যকে উপেক্ষা করা যায় না।।
এটা পড়ো👉 : ভারতের প্রধানমন্ত্রীর উপর সবচেয়ে সুন্দর নোট
** আরও পড়ে দেখুন ; লোকসভার স্পিকারের উপর A1 নোট
** আরও জানো ; মূখ্যমন্ত্রীর যোগ্যতা, ক্ষমতা ও কার্যাবলী সম্পর্কে A1 নোট
**** একটা সুন্দর নোট দেখে নাও : রাষ্ট্রপতির যোগ্যতা, নির্বাচন, ক্ষমতা ও কার্যাবলী সম্পর্কে