ভারতের সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের কী ভূমিকা ছিল? সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীরা কীভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন?
ভূমিকা : ভারতের বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের পর থেকে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় দেশ প্রেমের আদর্শ প্রচারিত থাকে সে সমস্ত দেশ প্রেম সম্পর্কিত লেখা ভারতীয় নারীদের যথেষ্ট প্রভাবিত করে। এছাড়াও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিপ্লবী দেশমাতার মুক্তির জন্য যে আত্মবলিদান দিয়েছিলেন তার দ্বারাও ভারতীয় নারীরা যথেষ্ট প্রভাবিত হন। যেমনটা ঘটেছিল কল্পনা দত্ত,বীণা দাস প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের ক্ষেত্রে।।
▪ বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের সময় নারীদের ভূমিকা ;-
বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের সময় বাংলার বেশ কয়েকজন নারী বিপ্লবী কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাদের মধ্যে ছিলেন সরলাদেবী চৌধুরানী, ননীবালা দেবী প্রমুখ। সরলা দেবী চৌধুরানী বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় স্বদেশী পণ্য বিক্রির জন্য লক্ষীর ভান্ডার স্থাপন করেন এবং বীরাঙ্গনা ব্রত চালু করেন স্বদেশী চেতনার বিকাশ ঘটানোর জন্য। অপরদিকে ননীবালা দেবী বাংলার বিপ্লবীদের আশ্রয়দান, গোপনে সংবাদ প্রেরণ এবং অস্ত্র সরবরাহের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
▪ লীলা নাগের দীপালি সংঘ প্রতিষ্ঠা :
বিপ্লবী লীলা রায় (নাগ) জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে নারীদের যুক্ত করার জন্য ঢাকায়য় ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে দীপালি সংঘের প্রতিষ্ঠা করেন। দিপালী সংঘের উদ্যোগে নারীদের লাঠিখেলা, শরীরচর্চা, অস্ত্র চালানো, অস্ত্রশস্ত্র জোগাড় ও বৈপ্লবিক আন্দোলনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হত। দিপালীর সংঘের সদস্যদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার এবং কল্পনা দত্ত।
▪ ভারতের প্রথম নারী শহীদ প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ;-
প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ছিলেন জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের এক অতি পরিচিত নাম। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের নায়ক মাস্টার সেনের সহযোগী ছিলেন তিনি। ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের নেতৃত্বে একদল বিপ্লবী চট্টগ্রামের পাহাড়তলি ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ করে ক্লাব বিপর্যস্ত করে দেয় এবং পটাশিয়াম সায়ানাইড বিষ জিভে লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন।
▪ কল্পনা দত্তের বিপ্লবী কর্মকাণ্ড ;
মাস্টারদা সূর্যসেনের ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মির এক উল্লেখযোগ্য নারী সদস্য ছিলেন কল্পনা দত্ত। গান কটনের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বিপ্লবীদের পালাতে সাহায্য করা, পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণের পরিকল্পনা করা, অস্ত্রশস্ত্র লুকিয়ে রাখা, গোপনে কাগজপত্র সংগ্রহ করা, ব্রিটিশদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কল্পনা দত্ত। চট্টগ্রামের বিখ্যাত বিপ্লবী নারী কল্পনা দত্ত বন্দি বিপ্লবী নেতাদের মুক্ত করার জন্য 'ডিনামাইট ষড়যন্ত্র' করেছিলেন।
▪ বীনা দাসের স্যানলি জ্যাকসনে হত্যার চেষ্টা ;
আধা বৈপ্লবিক সংগঠন 'ছাত্রী সংঘ'-এর সদস্য তথা কলেজ ছাত্রী ছিলেন বীণা দাস। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানের সময় সেনেট হলে বীনা দাস গভর্নর স্ট্যানলি জ্যাকসনকে হত্যার জন্য গুলি করেন (৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩২ খ্রি.)। জ্যাকসন অল্পের জন্য বেঁচে যান এবং জ্যাকসনকে হত্যার চেষ্টার অভিযোগে বীণা দাসের নয় বছর কারাদণ্ড হয়।
▪ ঝাঁসির রাণী ব্রিগেডের ক্যাপ্টেন লক্ষ্মী সায়গল ;-
রাসবিহারী বসুর আজাদ হিন্দ ফৌজের নারী বাহিনীর ক্যাপ্টেন ছিলেন লক্ষী স্বামীনাথানের বৈল্পবিক কাজকর্মও খুব উল্লেখযোগ্য ছিল।। আজাদ হিন্দ ফৌজের নারী বাহিনীর দায়িত্বে ছিলেন তিনি। তিনিই ঝাঁসির রাণী ব্রিগেডকে নেতৃত্বে দিয়ে জাতির মুক্তি সংগ্রামে যুক্ত করেন।।
উপসংহার ; ভারতের সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের যোগদান ছিল খুব সীমিত। সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে যে কয়েকজন নারী যোগদান করেছিলেন তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন বাংলার নারী।
এটা দেখো👉 : মাধ্যমিক ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ 50+ MCQ প্রশ্ন উওর
** ক্লিক করো👉 : নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর সম্পূর্ণ ইতিহাস
এটাও দেখো👉 : ২০২০ ইতিহাস প্রশ্নপত্রের সমাধান** ক্লিক করো 👉 : ২০১৭ মাধ্যমিক বাংলা প্রশ্নপত্র
*** এটাও পড়ে দেখো👉 : ২০১৭ মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্নপত্রের সমাধান