North Bengal University-1st Semester SEC Political Science SEC Syllabus- Legal Awareness Paper- এ তোমাদের লোক আদালতের বিষয়টা রয়েছে যেখানে তোমাদের 'লোক আদালতের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, গঠন, উদ্দেশ্য, কার্যাবলী এবং কার্য পদ্ধতি' সম্পর্কে পড়তে হবে। সেই কারণে আজকের এই পোস্টে আমরা Lok Adalat Or People's Court এর Historical Background, Composition, Functions And procedure of work-এর একটা সেরা নোট শেয়ার করলাম।। আশাকরি লোক আদালত সম্পর্কিত এই নোট তোমাদের কাজে আসবে।।
লোক আদালতের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, গঠন, উদ্দেশ্য, কার্যাবলী এবং কার্য পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা
ভূমিকা ; ভারতীয় বিচারব্যবস্থার এক অন্যতম বৈশিষ্ট্যে হলো লোক আদালতের উপস্থিতি। ভারতের লোক আদালত মূলত মহাত্মা গান্ধীর অহিংস নীতির উপর কাজ করে। লোক আদালত হিংসার পথে না গিয়ে শান্তিপূর্ণ উপায়ে বোঝাপড়া, আলাপ আলোচনার মাধ্যমে মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করে থাকে।লোক বলতে কী বোঝায় তার উত্তরে আমরা বলতে পারি- যেই আদালত মূলত দাম্পত্য, পারিবারিক, আর্থিক, পথ দুর্ঘটনা,বীমা সংক্রান্ত ছাড়াও অন্যান্য কিছু মামলার দ্রুত এবং স্বল্প ব্যয়ে নিষ্পত্তি করে থাকে, তাই হলো লোক আদালত। লোক আদালত হলো জনগণের আদালত।
ভারতের লোক আদালত সম্পর্কে বলা হয়-
▪ এই আদালত হল মূলত পরামর্শ এবং বোঝাপড়ার একটা মঞ্চ,
▪ লোক আদালত হল জনগণের বা জনতার আদালত এবং
▪ লোক আদালত হল শীঘ্র এবং সস্তায় ন্যায় পাওয়ার স্রোত।
▪ লোক আদালত গঠনের ইতিহাস বা লোক আদালতের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ; (Historical Background And Composition) ;
ভারতের সর্বপ্রথম লোক আদালত গঠিত হয়েছিল ১৯৮২ সালের মার্চ মাসে, গুজরাটে। এরপর আবার ১৯৮৬ তে চেন্নাইতেও লোক আদালত গঠন করা হয়। তবে,ভারতে লোক আদালতের সঠিক পথচলা শুরু হয়েছিল The Legal Services Act ১৯৮৭-এর হাত ধরেই। এই আইনগত পরিষেবা কর্তৃপক্ষ আইন ১৯৯৪ সালে সংশোধিত হয়।
সংশোধনীর ১৯ (১) নং ধারায় বলা হয় য , কেন্দ্র,রাজ্য ,জেলা ও তালুকে আইনগত পরিষেবা কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে। সেই কর্তৃপক্ষের হাতেই লোক আদালত গঠন করার দায়িত্ব অর্পণ করা হবে।
▪ লোক আদালতের গঠন ;
19 (2) নং ধারা অনুসারে- একটি অঞ্চলের লোক আদালত গঠিত হবে
▪ একজন কর্মরত কিংবা অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে নিয়ে এবং
▪ বাকি সদস্যদের মধ্যে একজন অবশ্যই হবেন খ্যাতনামা আইনজীবী এবং অপর একজন হবেন একজন বিশিষ্ট সমাজসেবী বা সমাজকর্মী। লোক আদালতের সদস্য সংখ্যা কত হলে তা ঠিক করে দেয় আইনগত পরিসেবা কর্তৃপক্ষ।
▪ লোক আদালত গঠনের উদ্দেশ্য কী? ;
▪ অধ্যাপক জে.সি.জোহারি তাঁর 'The Constitution of India : A Political Legal Study' গ্রন্থে বলেছিলেন- ন্যায়বিচার কখনােই ব্যয়সাপেক্ষ অথবা সময়সাপেক্ষ হওয়া উচিত নয়, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সাধারণ মানুষের কাছে বিষয়টি গ্রহণীয় হওয়া উচিত। অধ্যাপক জি.সি.জোহারি কথাটি লোক আদালতের ক্ষেত্রে মানানসই।
ভারতের লোক আদালত গঠিত হয়েছে-
১) প্রচলিত বিচারব্যবস্থার উপর থেকে কিছুটা চাপ হ্রাস করা।
২) ছোটোখাটো বা কম গুরুত্বপূর্ণ মামলাগুলির দ্রুত বিরােধ নিষ্পত্তির জন্য,
৩) এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, যাদের আর্থিক অবস্থা ততটাও ভালো নয় বা দরিদ্র মানুষ-তারাও যাতে অর্থের অভাবে ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত না হন,তাই স্বল্প ব্যয়ের সবাইকে ন্যায় বিচার পাইয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই লোক আদালতের গঠন করা হয়।
▪ লোক আদালতের কার্যাবলী ; (Functions Of Lok Adalat)
▪ যেসব বিষয় অত্যন্ত জটিল প্রকৃতিসম্পন্ন নয় , সেইসব বিষয় সংক্রান্ত বিরোধের নিষ্পত্তি লোক আদালত করে থাকে।
▪ আদালতে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা কিংবা বিচার শুরুর আগের অবস্থায় কোনো আদালত বা কর্তৃপক্ষ কিংবা কমিটি সংশ্লিষ্ট বিরোধটিকে লোক আদালতের কাছে পাঠাতে পারেন।
▪ যে যমস্ত মামলা দীর্ঘদিন থেকে অমীমাংসিত,যার দ্রুত সমাধান বা রায় প্রয়োজন, সেই সমস্ত মামলা যদি লোক আদালতে হস্তান্তরিত করা হয়, তাহলে লোক আদালত সেই সমস্ত মামলার দ্রুত এবং স্বল্প ব্যয় নিষ্পত্তি করে থাকে।
▪ লোক আদালতে মূলত দাম্পত্য জীবন সম্পর্কিত মামলা, পারিবারিক মামলা, আর্থিক মামলা,পথদুর্ঘটনা এবং বিমা সংক্রান্ত মামলার নিষ্পত্তি করা হয়ে থাকে।
লোক আদালতে মামলা নিষ্পত্তি হয় আলাপ আলোচনা, পরামর্শ দান, বোঝাপড়া, সমঝোতার মাধ্যমে।
▪ লোক আদালতের কার্যপদ্ধতি (procedure of work) :
বিবাদমান পক্ষ দুটির মধ্যে যে কোনো একটি পক্ষকে সংশ্লিষ্ট বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য লিখিতভাবে লোক আদালতে আবেদন জানাতে হয়।এরুপ আবেদনপত্র পরীক্ষার পর গ্রহণযোগ্য বলে মনে করলে সংশ্লিষ্ট বিরোধের নিষ্পত্তির দায়িত্ব এই আদালত গ্রহণ করেন। যে কোন বিরোধ মীমাংসার ক্ষেত্রে এই আদালত ন্যায়, সত্যতা, সমদর্শিতা এবং অন্যান্য আইনগত নীতি অনুসরণ করে থাকেন।
লোক আদালতের কার্যপদ্ধতি বিচার – বিভাগীয় কার্য – পদ্ধতির অনুরূপ। তাই এরূপ আদালত সাক্ষ্যপ্রমাণ গ্রহণ, দলিলপত্র তলব , যে কোন সরকারি নথিপত্র তলব প্রভৃতি করার অধিকারী।
আদালতের সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলি মেনে নিতে বাধ্য এবং আইনগত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেই সিদ্ধান্তকে কার্যকর করা হয়। লোক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা যায় না। তবে কোনো একটি বিরোধের নিষ্পত্তি করতে এরূপ আদালত ব্যর্থ হলে বিবাদমান পক্ষগুলি সাধারণ আদালতের কাছে বিচারপ্রার্থনার জন্য যেতে পারে। লোক আদালতে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে এবং বিনা খরচে বিচারকার্য সম্পাদিত হয় বলে লোক আদালতের জনপ্রিয়তা বিশেষভাবে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে।
** এটা পড়ুন👉 : জেনে রাখুন পারিবারিক হিংসা আইন সম্পর্কে! এই আইন সম্পর্কে জানতে হবেই!
** এটাও পড়ুন👉 : পণপ্রথা বিরোধী আইনের খুটিনাটি বিষয়