একটা নোটেই রাষ্ট্রপতির যোগ্যতা, নির্বাচন প্রক্রিয়া, ক্ষমতা, কার্যাবলী ও পদমর্যাদা

Ajit Rajbanshi
0


qualifications-election-powers-and-functions-of-the-president-of-india


ভারতের রাষ্ট্রপতির যোগ্যতা, নির্বাচন প্রক্রিয়া, ক্ষমতা, কার্যাবলী ও পদমর্যাদা

WBCHSE Class 12 Political Science Chapter 7 বা উচ্চমাধ্যমিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান সপ্তম অধ্যায়- ভারতের শাসন বিভাগ' এ তোমাদের প্রথমেই ভারতের রা সম্পর্কে এইভাবে লিখলে পূর্ণ নম্বর পাবে!! ষ্ট্রপতি সম্পর্কে পড়তে হবে। ছাত্রছাত্রীদের সুবিধার্থে আজকের ব্লগ পোস্টে "ভারতের রাষ্ট্রপতির যোগ্যতা, নির্বাচন প্রক্রিয়া, বেতন, ভাতা, ক্ষমতা, কার্যাবলী ও পদমর্যাদা" সম্পর্কে একটি সুন্দর নোট শেয়ার করা হলো।।


ভারতের রাষ্ট্রপতি পদের যোগ্যতা (Qualifications for the Candidates in the Election of The President):

সংবিধানের ৫৮ নং ধারায় রাষ্ট্রপতিপদে প্রার্থীর যোগ্যতাবলী সম্পর্কে আলোচনা যুক্ত আছে। সংবিধান অনুসারে-

১) ভারতের রাষ্ট্রপতি হতে গেলে প্রথমত তাকে ভারতের নাগরিক, 

২) অন্ততপক্ষে ৩৫ বছর বয়স্ক হতে হবে; 

) এবং লোকসভায় নির্বাচিত হবার যোগ্যতাসম্পন্ন না হোলে রাষ্ট্রপতিপদে নির্বাচনের যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না। সংবিধানে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, 

৪) কোন ব্যক্তি কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকার অথবা কেন্দ্র বা অন্য কোন কর্তৃত্বের অধীনে কোনো লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত 'থাকলে তিনি রাষ্ট্রপতিপদের যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না। কিন্তু রাষ্ট্রপতি বা উপ-রাষ্ট্রপতিপদে আসীন কোন ব্যক্তি, কোন রাজ্যের রাজ্যপাল বা কোন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বা রাজ্যমন্ত্রীর পক্ষে রাষ্ট্রপতিপদে নির্বাচিত হোতে কোন বাধা নেই। কোন রাজ্যের রাজ্যপাল বা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাষ্ট্রপতিপদে প্রার্থী হোলে তিনি পদত্যাগের পর মনোনয়নপত্র পেশ এবং নির্বাচনী প্রচারে অংশগ্রহণ করেন। 

৫) এছাড়াও উপরিক্ত শর্তগুলো পূরণ হলেও দেউলিয়া, বিকৃতমস্তিষ্ক এমন ব্যক্তিরা রাষ্ট্রপতি পদের জন্য নির্বাচনী প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারেন না। 


রাষ্ট্রপতি পদের শর্তাবলী (Conditions of President's Office) :

৫৯ নং ধারায় রাষ্ট্রপতিপদের শর্তাবলী যুক্ত করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি কেন্দ্রীয় আইনসভা বা রাজ্য আইনসভার কোন কক্ষের সদস্য থাকতে পারবেন না। কেন্দ্রীয় বা রাজ্য আইনসভার কোন কক্ষের কোন সদস্য রাষ্ট্রপতিপদে নির্বাচিত হোলে তিনি যে দিন রাষ্ট্রপতিপদে আসীন হয়েছেন, সে দিনই তিনি ঐ সদস্যপদ ত্যাগ করেছেন বলে গণ্য করা হবে। রাষ্ট্রপতি কোন লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত থাকতে পারবেন না বলে সংবিধানে শর্ত আরোপ করা হয়েছে।


ভারতের রাষ্ট্রপতি কিভাবে নির্বাচিত হবে? || ভারতের রাষ্ট্রপতির নির্বাচন প্রক্তিয়া কী?

ভারতের রাষ্ট্রপতি মূলত জনগণের দ্বারা পরোক্ষভাবে নির্বাচিত হন। ভারতের রাষ্ট্রপতি একক হস্তান্তরযোগ্য সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে নির্বাচিত হয়ে থাকেন। 

ভারতের রাষ্ট্রপতির নির্বাচনে জনগণ প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেন না কিন্তু জনগণ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করে থাকেন। ভারতের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মূলত আইনসভার নির্বাচিত সদস্যরাই অংশগ্রহণ করে থাকেন।

১) ভারতের কেন্দ্রীয় পার্লামেন্টের উভয়কক্ষ রাজ্যসভা এবং লোকসভার শুধুমাত্র নির্বাচিত সদস্য, 

২) ভারতের সকল অঙ্গরাজ্যের আইনসভা নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে এবং

৩) ভারতের দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল দিল্লি এবং পন্ডিচেরির আইনসভার নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে একটি ইলেক্টোরাল কলেজ বা নির্বাচনী সংস্থা গঠন করা হয় এবং সেই Electoral College- এর মাধ্যমে মূলত ভারতের রাষ্ট্রপতি ৫ বছরের কার্যকালের মেয়াদে নির্বাচিত হয়ে থাকেন।


রাষ্ট্রপতির বেতন বা ভাতা (Salary and Allowances of the President):

সংবিধানে রাষ্ট্রপতির বেতন, ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির বেতন, ভাতা ও অন্যান্য আর্থিক সুযোগ-সুবিধা সংসদ আইন প্রণয়ন রাষ্ট্রপতির বেতন ও ভাতা ইত্যাদি করে স্থির করে। বতর্মানে ভারতের রাষ্ট্রপতির বেতন সবকিছু মিলিয়ে ১,৫০,০০০ টাকার বেশি।


ভারতের রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও কার্যাবলী সম্পর্কে আলোচনা 

ভারতীয় সংবিধানের ৫২ নম্বর ধারায় রাষ্ট্রপতি পদের উল্লেখ রয়েছে। রাষ্ট্রপতি হলেন দেশের প্রথম নাগরিক এবং তিনিই হলেন দেশের প্রধান। ভারতীয় সংবিধানের রাষ্ট্রপতির হাতে বিভিন্ন ধরনের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপতির হাতে যে সমস্ত ক্ষমতা রয়েছে,সেই ক্ষমতা ও কার্যাবলীকে আমরা সর্বমোট পাঁচটা ভাগে ভাগ করতে পারি। 

▪ প্রথমত- শাসন সংক্রান্ত ক্ষমতা ;

▪ দ্বিতীয়ত-আইন সংক্রান্ত ক্ষমতা ;

▪ তৃতীয়ত- বিচার সংক্রান্ত ক্ষমতা;

▪ চতুর্থ-অর্থ সংক্রান্ত ক্ষমতা 

▪ এবং- পঞ্চম জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত ক্ষমতা।

▪ প্রথমত শাসন সংক্রান্ত ক্ষমতা ; 

রাষ্ট্রপতির শাসন ক্ষমতাকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথমত প্রশাসনিক ক্ষমতা এবং দ্বিতীয়ত সামরিক ক্ষমতা। সংবিধানের ৫৩ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে শাসন বিভাগের প্রধান হিসেবে তিনি সমস্ত শাসন বিভাগীয় ক্ষমতা ভোগ করবেন। তিনি এই সমস্ত শাসন ক্ষমতা নিজে প্রত্যক্ষভাবে বা পরোক্ষভাবে তার অধনস্থ কর্মচারীদের মাধ্যমে তা প্রয়োগ করতে পারেন।। 

▪ শাসন বিভাগের প্রধান হিসেবে রাষ্ট্রপতি দেশের প্রধানমন্ত্রী, অঙ্গরাজ্যের রাজ্যপাল, মন্ত্রিপরিষদের মন্ত্রীদের, সুপ্রিম কোর্ট এবং হাইকোর্ট বিচারপতিদের, অ্যাটর্নি জেনারেল সহ অন্যান্য কিছু পদাধিকারীকদের নিয়োগ করেন। নিয়োগ করার পাশাপাশি বিশেষ কিছু পদঅধিকারীকদের পদচ্যুত করার ক্ষমতাও রাষ্ট্রপতি রয়েছে।

▪ আবার রাষ্ট্রপতি যেহেতু ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর সর্বাধিনায়ক, সেই কারণে তার হাতে কিছু সাময়িক ক্ষমতাও রয়েছে। যেমন- স্থল, জল এবং নৌবাহিনীর প্রধানদের নিয়োগ করা,যুদ্ধ ঘোষণা এবং যুদ্ধ বন্ধ করা, শান্তি স্থাপন করার ক্ষমতা তার হাতেই দেওয়া হয়েছে।।

▪ দ্বিতীয়ত- আইনি ক্ষমতা ও কার্যাবলী ; 

রাষ্ট্রপতির হাতে বেশ কিছু আইনি ক্ষমতাও দেওয়া হয়েছে। সংবিধানের ৭৯ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে যে ভারতীয় পার্লামেন্ট গঠিত হবে লোকসভা, রাজ্যসভা এবং রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে। রাষ্ট্রপতি হলেন আইনসভার কার্যকরী এবং অবিচ্ছেদ্য অংশ। রাষ্ট্রপতি যে আইনের ক্ষমতা ও কার্যাবলী রয়েছে, তা হল-

১) লোকসভার প্রথম অধিবেশনে উদ্বোধনী এবং যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দেন।

২) পার্লামেন্টের অধিবেশন আহ্বান করা,স্থগিত রাখা এবং লোকসভা ভেঙে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে রাষ্ট্রপতির।

৩) রাষ্ট্রপতি রাজ্যসভায় ১২ জন সদস্য এবং লোকসভায় আবার সদস্যদের মনোনয়নও করতে পারেন।

৪) কোনো বিল নিয়ে বিরোধ বাধলে উভয়কক্ষের যৌথ অধিবেশন আহ্বান করেন রাষ্ট্রপতি।

৫) কোন বিলকে আইনে পরিণত করতে গেলে সেই রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষর প্রয়োজন হয়।

৬) আবার পার্লামেন্টের অধিবেশন বন্ধ থাকাকালীন বিশেষ প্রয়োজনে ১২৩ নং ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ বা অর্ডিন্যান্স জারি করতে পারেন।

তৃতীয়ত- বিচার সংক্রান্ত ক্ষমতা ; রাষ্ট্রপতির হাতে আবার কিছু বিচার বিভাগীয় ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এবং অঙ্গরাজ্যের হাইকোর্টের বিচারপতিদের নিয়োগ করার ক্ষমতা রয়েছে রাষ্ট্রপতির হাতে। তবে বিচারপতিদের নিয়োগ করার পূর্বে রাষ্ট্রপতি অবশ্যই সুপ্রিম কোর্ট এবং হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিদের সঙ্গে পরামর্শ করেন। আবার পার্লামেন্টের সুপারিশ ক্রমে বিচারপতিদের পদচ্যুতও করতে পারেন রাষ্ট্রপতি। 

এছাড়াও সংবিধানের ৭২ নম্বর ধারায় রাষ্ট্রপতিকে এক বিশেষ বিচার বিভাগীয় ক্ষমতা দেওয়া হয়েছেসংবিধানের ৭২ নম্বর ধারা অনুযায়ী আদালতে মৃত্যু দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি যদি রাষ্ট্রপতির কাছে তার দন্ড মাফ করার জন্য আবেদন জানান, তাহলে রাষ্ট্রপতি তার মৃত্যুদন্ডের শাস্তি বাতিল করতে পারেন।।

▪ চতুর্থ-অর্থ সংক্রান্ত ক্ষমতা ; রাষ্ট্রর হাতে অর্থ সংক্রান্ত বহু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা রয়েছে। 

রাষ্ট্রপতিকে প্রতিবছর পার্লামেন্টে একটি আর্থিক বছরের আনুমানিক আয় ব্যয়ের একটি বিবরণী পেশ করতে হয়। রাষ্ট্রপতির হয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী সেই আনুমানিক আয়-ব্যয়ের বিবরণী হিসাবে বাজেট পেশ করে থাকেন। পার্লামেন্টে বাজেট পেশের পূর্বে অর্থমন্ত্রীকে আবার রাষ্ট্রপতির পূর্ব অনুমতি নিতে হয়। আবার, সরকারের কর এবং ঋণ সংক্রান্ত ব্যাপারেও রাষ্ট্রপতি সম্মতির প্রয়োজন হয়। এছাড়াও   কোন আপাতকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ভারতে যে আকস্মিক তহবিল (Contungency Fund Of India) রয়েছে,সেই তহবিলের দায়িত্বও রয়েছে রাষ্ট্রপতির হাতে।।

▪ পঞ্চম-জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত ক্ষমতা ; জরুরি অবস্থা বলতে কী বোঝায় সেই বিষয়ে ভারতীয় সংবিধানে কিছু বলা হয়নি। আর নাতো জরুরি অবস্থা কাকে বলে সেউ সম্পর্কে কোনো সংজ্ঞা রয়েছে। তবে, যখন কোনো অভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিক কারণে দেশের কোনো স্থানে অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে থাকে এবং একটা বিপদজনক অবস্থা তৈরি হয়, তখন সেটাই হয় জরুরি অবস্থা। এটা সমগ্র দেশে  রাজ্যে উভয় ক্ষেত্রেই হতে পারে। ভারতীয় সংবিধানে ৩৫২ নম্বর ধারায় জাতীয় জরুরি অবস্থা, ৩৫৬ নং ধারা অনুযায়ী রাজ্যের শাসনতান্ত্রিক অচল অবস্থা সংক্রান্ত জরুরি অবস্থা এবং ৩৬০ ধারায় জাতীয় আর্থিক জরুরি অবস্থা জারি করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রপতি হাতে। তবে হ্যাঁ জরুরি অবস্থা জারির এই ঘোষণা পার্লামেন্ট কর্তৃক অনুমোদিত হতে হয়। 



  • ভারতের রাষ্ট্রপতির পদমর্যাদা ;

রাষ্ট্রপতির হাতে এত ক্ষমতা থাকায় মনে হতে পারে যে তিনি হলেন দেশের প্রধান প্রকৃত শাসক। কিন্তু বাস্তব সম্পূর্ণ আলাদা। ১৯৭৬ সালের সংবিধানের ৪২ তম সংশোধনের বলা হয়েছিল যে রাষ্ট্রপতি মন্ত্রীপরিষদের পরামর্শ মেনে চলতে বাধ্য। তিনি মন্ত্রিপরিষদ এবং প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে যাবতীয় কাজ করে থাকেন। সেই কারণে বলা যায় যে প্রধানমন্ত্রী হলেন প্রকৃত শাসক এবং রাষ্ট্রপতি হলেন নাম সর্বস্ব শাসক মাত্র। ডঃ বি.আর. আম্বেদকর রাষ্ট্রপতি পদ সম্পর্কে বলেছিলেন- ব্রিটিশ সংবিধানে রাজা বা রানীর যে মর্যাদা ভারতের রাষ্ট্রপতিরও সেই একই মর্যাদা। তিনি জাতির প্রধান কিন্তু শাসন বিভাগের প্রধান নন।



** আরও পড়ে দেখুন ; লোকসভার স্পিকারের উপর A1 নোট

** আরও জানো ; মূখ্যমন্ত্রীর যোগ্যতা, ক্ষমতা ও কার্যাবলী সম্পর্কে A1 নোট

*** এটাও পড়ুন 👉 ; ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের খুটিনাটি বিষয়

** আরও পড়ে দেখো👉 : ভারতীয় সংবিধানের উল্লেখযোগ্য ১৩টি বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা 

▪ আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে জয়েন করুন👉 Telegram Channel 
▪ সরাসরি ইমেইল করতে 👉 rajajit6666@gmail.com
▪ ফেসবুক পেজ থেকে ম্যাসেজ করুন👉 Facebook Page 

▪ ফলো করুন আমাদের👉 WhatsApp Channel

Post a Comment

0Comments

Post a Comment (0)