সরকারি বাজেটের (Budget) উপর সবচেয়ে সহজ ও সেরা নোট

Ajit Rajbanshi
0

সরকারি বাজেট তৈরি এবং সংসদে বাজেট পাসের পদ্ধতি 

"বাজেট কী বা বাজেট বলতে কী বোঝায়, সরকারি বাজেট কিভাবে তৈরি হয় এবং সংসদে বাজেট কিভাবে পাস হয়"-এই সম্পর্কে আমাদের সকলের ধারণা থাকা দরকার। North Bengal University'র যুক্ত কলেজে যারা Major Political Science নিয়ে পড়ো, তাদের 2nd Semester SEC Political Science Syllabus-এ 'সরকারি বাজেট প্রণয়ন এবং বাজেট পাসের পদ্ধতি সম্পর্কে পড়তে হবে। ছাত্রছাত্রীদের সুবিধার্থেই বাজেট সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় শেয়ার করা হলো।।

সরকারের বাজেট বলতে কী বোঝায় বা বাজেট কাকে বলে?(What is budget?)

সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবার,বিশেষ করে চাকুরিজীবী নির্ভরশীল পরিবারগুলি মাসের শুরুতেই সংসারের কোন খাতে কত খরচ হবে, কিভাবে,কোথায় কত সেভিংস হবে?-সবই থাকে এই সাংসারিক বাজেটে। এই একই ধরনের হিসাবই যখন বৃহত্তর আকারে দেশের হিসেবে করা হয়, তখন তা হয়ে দেশের বাজেট। দেশের ক্ষেত্রে এই বাজেট প্রতি বছরে একবারই করা হয়। আগামী এক বছরে সরকারের কোন খাত থেকে সরকারের কত টাকা আয় হতে পারে এবং কোন কোন খাতে কত টাকা ব্যয় হবে- এই আয় ব্যয়ের যে আনুমানিক হিসেবের খসড়া প্রস্তুত করা হয়, তাকে বলা হয় বাজেট (Budget). ভারতীয় সংবিধানে বাজেট শব্দের উল্লেখ নেই। সংবিধানে বাজেটকে বার্ষিক অর্থ বিষয়ক বিবরণী (Annual Financial Statement) বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

বাজেটে মূলত দুটি দিক থাকে। একটি হলো আয়ের দিক এবং অপরটি হল ব্যয়ের দিক। আগামী এক বছরে কোন কোন বিষয়ের জন্য বা কোন কোন খাতে সরকারের কত ব্যয় বরাদ্দ করা হবে বা আনুমানিক কত ব্যয় হতে পারে- সে নিয়ে বাজেটের ব্যয় সম্পর্কিত দিক নির্ধারিত হয় এবং কোন কোন সূত্র থেকে সরকারের কত রাজস্ব সংগ্রহ হতে পারে বা আয় হতে পারে তার আনুমানিক হিসেব নিয়ে বাজেটের আয়ের দিক ঠিক করা হয়।


▪ সরকারি বাজেটে তিনটি বিষয় থাকে-

১)প্রথমত সরকার কোন কোন উৎস থেকে কত টাকা আয় করবে এবং কোন খাতে কত টাকা ব্যয় করবে সেই সম্পর্কিত প্রস্তাবসমূহ,

২) দ্বিতীয়ত সরকারের আয় ব্যয় সমান না হলে কোন কোন ক্ষেত্রে নতুন কর আরোপ করা হবে, পরিবর্তন বা অপরিবর্তিত থাকবে সেই সম্পর্কিত প্রস্তাবসমূহ;  

৩) এবং তৃতীয়তঃ সরকার কোন কোন উৎস থেকে কত টাকা ঋণ গ্রহণ করবে এবং কী করে তা পরিশোধ করবে সেই সম্পর্কিত প্রস্তাব সমূহ। 

সহজ ভাষায় বাজেট হল আগামী এক বছরে সরকার কীকরে চলবে তার আর্থিক পরিকল্পনা।

NBU- 2nd Semester Major & SEC Political Science Paper' এর সম্পূর্ণ সিলেবাসের ডিজিটাল পিডিএফ নোট খুবই কম দামে নিতে চাইলে আজই যোগাযোগ করো +918388986727 নম্বরে (WP / CALL)


▪ কেন্দ্রীয় বাজেট কীভাবে তৈরি হয়? || Procedure Of Formulation Budget 

আমাদের দেশে চলতি পহেলা এপ্রিল থেকে পরবর্তী বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত সময়কালকে আর্থিক বছর হিসেবে ধরা হয়। তবে আগামী বছরের বাজেট তৈরির কাজ চলতি জুলাই বা আগস্ট মাসেই শুরু করা হয়। বাজেট তৈরীর কাজ করে থাকে অর্থমন্ত্রক। বাজেট তৈরির জন্য অর্থ মন্ত্রক সরকারের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক NITI আয়োগ এবং বিভিন্ন ব্যয় মন্ত্রকের সাথে পরামর্শ করে। বাজেট তৈরি করার জন্য অর্থ মন্ত্রক জুন বা জুলাই মাসে সমস্ত মন্ত্রক, রাজ্য, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলির কাছে একটি নমুনা ফর্ম পাঠিয়ে আগাম হিসাব করতে বলে। অর্থ মন্ত্রক বিভিন্ন দপ্তরকে যে নমুনা ফর্ম পাঠিয়ে থাকে,সেই ফর্মে কিছু বিষয় থাকে। যেমন- 

১) গত তিন বছরে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে কত টাকা খরচ করা হয়েছে?

২) সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চলতি বছরে কত টাকা খরচ করা হয়েছে?

৩) আগামী বছরের জন্য আয়-ব্যয়ের সম্ভাব্য হিসাব 

৪) এবং সম্ভাব্য হিসাব বাড়া বা কমার কারণসমূহ; সেই ফর্মে জানাতে হয়।

এইভাবে সমস্ত মন্ত্রক, রাজ্য, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলির কাছে একটি থেকে প্রাপ্ত দাবির পর সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা তা যাচাই-বাছাই করেন। এরপর অ্যাকাউন্টেন্ট জেনারেলের অফিস থেকে প্রতি দপ্তর সম্পর্কিত মতামত এবং সুপারিশ অর্থমন্ত্রকে গিয়ে জমা পড়ে। এবং এইসব রিপোর্টের ভিত্তিতেই বাজেট রচনা হয়।


▪ কেন্দ্রীয় বাজেট পাশের পদ্ধতি আলোচনা || Procedure Of Passing Budget 

কেন্দ্রীয় বাজেট প্রণয়নের পর, সেই বাজেট পাস নিম্নলিখিতভাবে ধাপ গুলো পেরিয়ে পাস হয়। 

প্রথমত বাজেট পেশ ; 

▪ সংবিধানের ১১২(১) নম্বর ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে যে রাষ্ট্রপতি প্রতিটি আর্থিক বছরের আনুমানিক আয়-ব্যয়ের বিবরণ সংসদের উভয়পক্ষের নিকট পেশ করানোর ব্যবস্থা করবেন। রাষ্ট্রপতির তরফে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী সেই আনুমানিক আয়-ব্যয়ের বিবরণ বা বাজেট পেশ করে থাকেন। রাষ্ট্রপতির অনুমতি সাপেক্ষে অর্থমন্ত্রী বা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কোনো মন্ত্রী ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিনে লোকসভায় বাজেট পেশ করে থাকেন। 

দ্বিতীয়ত বাজেটের উপর আলোচনা ; বাজেট পেশের কয়েকদিন পর বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা হয়ে থাকে। বাজেটের উপর লোকসভা এবং রাজ্যসভা উভয় আলোচনা করতে পারে। বাজেটের মধ্য দিয়ে যে সরকারি নীতি বা উদ্দেশ্য প্রতিফলিত হয়েছে- সেগুলোই মূলত এই সাধারণ আলোচনায় শাসকদল এবং বিরোধী দলের সদস্যরা যে যার মতো নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আলোচনা এবং সমালোচনা করে থাকেন।

তৃতীয়ত স্ট্যান্ডিং কমিটির রিপোর্ট : বাজেটের উপর সাধারন আলোচনার পর তিন থেকে চার সপ্তাহ পার্লামেন্টে বাজারের কাজ মূলতুবি থাকে। এই সময়টাতে পার্লামেন্টের ২৪ টি ডিপার্টমেন্টাল স্ট্যান্ডিং কমিটি বাজেটের প্রতিটি বিষয় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করে এবং তার ভিত্তিতে তাদের রিপোর্ট পেশ করে থাকে।

চতুর্থত- ব্যয় বরাদ্দের দাবী অনুমোদন ; কমিটির রিপোর্টের পর লোকসভায় শুরু হয় বাজেটের ব্যয় বরাদ্দের দাবির উপর আলোচনা ও ভোটাভুটি। বাজেটের মাধ্যমে সরকারের বিভিন্ন দপ্তর বা মন্ত্রী হয়ে যে পরিমাণ অর্থ ব্যবহারের দাবি জানানো হয়েছে তা লোকসভা কতৃক অনুমোদিত হতে হয়। এই পর্যায়ে ব্যয় বরাদ্দের দাবীর উপর লোকসভার সদস্যরা আলোচনা করতে পারেন এমনকি তারা সেই দাবির উপর-

১) ব্যয় সংক্ষেপ সংক্রান্ত ;

২) নীতি অনুমোদন সম্পর্কিত 

৩) বা প্রতিকী ছাঁটাই প্রস্তাবও আনতে পারেন। 

(ছাঁটাই প্রস্তাবেও কিন্তু ভোট গ্রহণ হয়। ভোটে ছাঁটাই প্রস্তাব পাস হয়ে যাওয়া মানে ক্ষমতায় থাকা সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে।)

পঞ্চম পর্যায় ভোটগ্রহণ : নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাজেট পাশের কাজ শেষ করার জন্য লোকসভার স্পিকার বহু ক্ষেত্রেই বাজেট নিয়ে আর বিস্তারিত আলোচনা না করেই বাজেট আলোচনার শেষ দিনে একটি বিশেষ পদ্ধতির আশ্রয় নিয়ে (গিলোটিন পদ্ধতি) বাজেটের দাবীগুলো ভোটে দিয়ে দেন। সরকারের ব্যয়ের দাবীর উপর লোকসভায় ভোট গ্রহণ হয়। ভোটে অবশ্যই ব্যয়ের দাবীগুলো পাস বা অনুমোদিত হতে হয়।

ষষ্ঠ : বিনিয়োগ বিল : বাজেটে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রকের বা দপ্তরের জন্য যে পরিমাণ অর্থ ব্যয়ের দাবি জানানো হয়েছে তা খরচ হবে ভারতের সঞ্চিত তহবিল থেকে। কিন্তু এই সঞ্চিত তহবিল থেকে এক টাকাও খরচ করা যাবে না পার্লামেন্ট কর্তৃক প্রণীত আইনের সমর্থন ছাড়া। ভারতের সঞ্চিত তহবিল থেকে অর্থ ব্যয় করার জন্য বিনিয়োগ বিল  (Appropriation Bill) সরকারকে পাস করতে হয়। বিনিয়োগ বিল পাস হওয়ার পরেই সরকার ভারতের সঞ্চিত তহবিল থেকে বিভিন্ন দপ্তর বা মন্ত্রকের জন্য অর্থ ব্যয় করতে পারে। 

সপ্তম Financial Bill : বাজেটে শুধুমাত্র ব্যয়ের দিক থাকে না সরকারের আয়ের দিকটাও থাকে। কিন্তু সরকার কখনোই পার্লামেন্টের আইন ছাড়া কর ধার্য, কর সংগ্রহ করতে পারে না। এই কারণে সরকারকে বাৎসরিক বাজেটের মতো রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে Financial Bill পাস করিয়ে নিতে হয়। ফাইন্যান্সিয়াল বিল পাশের মধ্যে দিয়েই সরকারের বাজেট পাসের কাজ শেষ হয়।।



*** এটাও পড়তে পারেন 👉 ; আনুমানিক ব্যয় হিসাব কমিটির গঠন ও কার্যাবলী

** এটাও পড়ে দেখুন👉 ; সরকারি গাণিতিক কমিটির A2Z

*** এটা পড়ে দেখুন ; কেন্দ্রীয় মন্ত্রীপরিষদের গঠন ও কার্যাবলী সম্পর্কে সেরা নোট

** আরও পড়ে দেখুন👉 : ভারতীয় সংবিধানের উল্লেখযোগ্য ১৩টি বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা 

** আরও পড়ে দেখুন ; লোকসভার স্পিকারের উপর A1 নোট


▪ আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে👇 
▪ সরাসরি ইমেইল করতে 👉 rajajit6666@gmail.com 
 ▪ আমাদের ফেসবুক পেজ থেকে ম্যাসেজ করুন Facebook Page 
Also You Can Follow Our 

Post a Comment

0Comments

Post a Comment (0)