রাজ্যের শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা বা রাষ্ট্রপতি শাসন বলতে কী বোঝায়?
ভারতের কেন্দ্রীয় শাসন বিভাগের প্রধান হিসেবে ভারতের রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৩৫২ নং ধারা অনুসারে জাতীয় জরুরি অবস্থা, ৩৫৬ নং ধারা অনুসারে রাজ্যের শাসনতান্ত্রিক অচল অবস্থা সংক্রান্ত জরুরি অবস্থা এবং ৩৬০ নং ধারা অনুসারে জাতীয় আর্থিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন।
সংবিধানে ৩৫৬ (১) নং ধারায় শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থার কারণ উল্লেখিত আছে। সংবিধানে শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা বলতে ৩৫৬(১) নং ধারণা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির ঘোষণাকে বোঝায়। সাধারণভাবে শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা ঘোষণাকে রাষ্ট্রপতির শাসনরূপে অভিহিত করা হয়ে থাকে। সংবিধানে শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থার কোন বিস্তৃত ব্যাখ্যা নেই।
তবে, ৩৫৬ (১) নং ধারার বক্তব্য বিশ্লেষণ করলে সাংবিধানিক অচলাবস্থার অতি সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা পেশ করা সম্ভব। এই ধারায় বলা হয়েছে যে ভারতের রাষ্ট্রপতি কোন রাজ্যের রাজাপাল কর্তৃক প্রেরিত কোন প্রতিবেদন অথবা অন্য কোন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এ বিষয়ে যদি নিশ্চিত হন যে কোন রাজ্যে সংবিধান অনুযায়ী প্রশাসন পরিচালনা সম্ভব নয় তাহলে তিনি সেই রাজ্যের শাসনভার স্বহস্তে গ্রহণ করতে পারেন। একেই বলা হয় রাজ্যে শাসনতান্ত্রিক অচল অবস্থা বা রাষ্ট্রপতি শাসন। সাধারণভাবে এই বিষয়টি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দপ্তরের এক্তিয়ারের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু মূলত প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকেন।
রাষ্ট্রপতি কেন রাজ্যের শাসনতান্ত্রিক অচল অবস্থা জারি করেন? || রাজ্যে কেন রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হয়?
উপরি-উক্ত আলোচনা থেকে দুটি দিক উদ্ঘাটন করা গেল। প্রথমত, রাষ্ট্রপতি কোন কোন সূত্র থেকে কোন রাজ্যে সাংবিধানিক অচলাবস্থা সম্পর্কে অবহিত হোতে পারেন এবং দ্বিতীয়ত, সাংবিধানিক অচলাবস্থা ঘোষণার প্রধান কারণ কি?
সংবিধান অনুসারে রাষ্ট্রপতি রাজ্যপালের প্রতিবেদন থেকে শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন। রাষ্ট্রপতি ঐ তথ্যের ভিত্তিতে যদি নিশ্চিত হন যে সংশ্লিষ্ট রাজ্যে সংবিধান অনুযায়ী প্রশাসন কার্য পরিচালনা সম্ভব নয়, তাহলে তিনি শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা ঘোষণা করতে পারেন।
রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হলে কী হয়?
রাজ্যে সংবিধানিক অচলাবস্থা বা রাষ্ট্রপতির শাসন বলবৎকরণের প্রতিক্রিয়া রাজ্য প্রশাসনের সকল ক্ষেত্রেই প্রতিফলিত হয়। অর্থাৎ রাজ্যে প্রশাসন পরিচালনা, আইন প্রণয়ন এবং অর্থ-বিষয়ক ক্ষমতা পরিচালনার ক্ষেত্রে তার প্রভাব পড়ে।
প্রথমত, কোন রাজ্যে রাষ্ট্রপতির শাসন বলবতের পর রাষ্ট্রপতির ঘোষণা অনুযায়ী ৩৫৬ নং ধারা অনুসারে রাষ্ট্রপতির তরফ থেকে রাজ্যপাল প্রশাসন পরিচালনা করেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই লক্ষ্য করা গেছে যে, কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক নির্বাচিত উপদেষ্টাদের সাহায্যে রাজ্যপাল রাজ্যের প্রশাসন পরিচালনা করেন। উপদেষ্টাদের বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্ব ন্যস্ত করা হয়ে থাকে। রাজ্যপাল এই পরিস্থিতিতে ঘোষণা কার্যকর করার জন্য বিধি প্রণয়ন করতে পারেন। তবে বাষ্ট্রপতি এই ঘোষণার দ্বারা রাজ্যের হাইকোর্টের স্বহস্তে বা তার পরিবর্তন সাধন করতে পারেন না।
দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্রপতি শাসন বলবৎ হবার পর রাষ্ট্রপতি রাজ্যের বিধানসভা ভেঙে দিতে অথবা বিধানসভার কার্যাবলী বাতিল করতে পারেন। অনেক সময় লক্ষ্য করা গেছে যে, রাষ্ট্রপতি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই বিধানসভা ভেঙে দেন নি। বিকল্প সরকারের গঠনের সম্ভাবনা সৃষ্টি করা যায় কি না তার জন্যই বিধানসভাকে সাসপেন্ড করে রাখা হয়। বিধানসভা ভেঙে দেওয়া অথবা সাসপেন্ড করা হোলে পার্লামেন্ট সংশ্লিষ্ট রাজ্যের জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন, বাজেট প্রস্তাব আলোচনা এবং অনুমোদন করেন। তবে এই ক্ষেত্রে বিভিন্ন দলের সদস্যদের নিয়ে গঠিত সংসদীয় উপদেষ্টা কমিটি কেন্দ্রীয় সরকারকে পরামর্শ দেয়। তরে এই কমিটির পরামর্শ গ্রহণ কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে বাধ্যতামূলক নয়।
তৃতীয়ত, সংবিধানে আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে, কোন রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন বলবতের পর পার্লামেন্ট যেসব আইন প্রণয়ন করেছেন সে আইনের সঙ্গে পূর্বে প্রণীত রাজ্য আইনের কোন অসঙ্গতি দেখা দিলে সেই অসঙ্গতিপূর্ণ অংশ রাষ্ট্রপতি শাসন প্রত্যাহারের পরে আর বলবৎ থাকতে পারে না।
রাজ্যের শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা জারির ইতিহাস
এটা পড়ো👉 : ভারতের প্রধানমন্ত্রীর উপর সবচেয়ে সুন্দর নোট
** চাইলে এটাও পড়তে পারো👉 ; ভারতীয় পার্লামেন্টের গঠন ও কার্যাবলী সম্পর্কে সেরা নোট
** আরও পড়ে দেখুন ; লোকসভার স্পিকারের উপর A1 নোট
** আরও জানো ; মূখ্যমন্ত্রীর যোগ্যতা, ক্ষমতা ও কার্যাবলী সম্পর্কে A1 নোট
**** একটা সুন্দর নোট দেখে নাও : রাষ্ট্রপতির যোগ্যতা, নির্বাচন, ক্ষমতা ও কার্যাবলী সম্পর্কে