Fundamental Duties Of Indian Citizens || ভারতীয় নাগরিকদের মৌলিক কর্তব্য
পরিবারের সদস্য হিসেবে একজনের যেমন পরিবারের সদস্যদের প্রতি কিছু দায়িত্ব থাকে, সেরকমই সমাজের নাগরিক হিসেবে, এই দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের প্রত্যেকেরই এই দেশের প্রতি কিছু অবশ্য পালনীয় কর্তব্য তাকে। সমাজের প্রতি বা দেশের প্রতি অবশ্য-পালনীয় সেই সমস্ত কর্তব্য গুলিকেই আমরা মৌলিক কর্তব্য (Fundamental Duties) বলি।
** ভারতীয় সংবিধানে কবে, কিভাবে মৌলিক কর্তব্য যুক্ত হয়েছিল?
১৯৫০ সালের ২৬ শে জানুয়ারি ভারতের সংবিধান যখন কার্যকর হয়, সেই সময় থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ২৬ বছর ভারতীয় সংবিধান কার্যকর থাকার পরেও নাগরিকদের জন্য ভারতীয় সংবিধানে কোনো মৌলিক কর্তব্য নথিভুক্ত ছিল না। কিন্তু ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর তৎপরতায় ১৯৭৬ সালে ৪২ তম সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে ভারতীয় সংবিধানের PART (IV) Article 51(A)-তে ভারতীয় নাগরিকদের জন্য ১০ টি মৌলিক কর্তব্য বা Fundamental Duties যুক্ত করা হয়। এরপর ২০০২ সালে ভারতীয় সংবিধানে ৮৬ তম সংশোধনীর মাধ্যমে ভারতীয় নাগরিকদের জন্য আরো একটি নতুন মৌলিক কর্তব্যযুক্ত করা হয়। ফলে বর্তমানে ভারতীয় সংবিধানে নাগরিকদের মৌলিক কর্তব্যের সংখ্যা ১১.
** ভারতীয় সংবিধানে মৌলিক কর্তব্যের ধারণাটি যুক্ত করা হয়েছে রাশিয়ার সংবিধান থেকে।
ভারতীয় সংবিধানে নাগরিকদের জন্য যে ১১ টি মৌলিক কর্তব্য রয়েছে তা হল-
১) প্রথমত : ভারতের সংবিধান মান্য করা, সংবিধানের মহান আদর্শ, জাতীয় প্রতিষ্ঠা, জাতীয় পতাকা এবং জাতীয় সংগীতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা।
২) দ্বিতীয়ত : যেসব মহান আদর্শ ভারতের জাতীয় সংগ্রামে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল, সেগুলিকে সংরক্ষণ করা এবং অনুসরণ করা।
৩) তৃতীয়তঃ ভারতের সার্বভৌমত্ব,ঐক্য এবং সংহতিকে সমর্থন করা এবং সংরক্ষণ করা।
৪) চতুর্থ : দেশকে রক্ষা করা এবং প্রয়োজনে জাতির সেবায় আত্মনিয়োগ করা।
৫) পঞ্চমত: ভাষা,ধর্ম,আঞ্চলিক ও শ্রেণীগত ভিন্নতার ঊর্ধ্বে উঠে গিয়ে ভারতীয়দের মধ্যে ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ববোশ বিকাশসাসন করা এবং মহিলাদের মর্যাদাহানি করে এমন সমস্ত প্রথা, জিনিস বর্জন করা।
বিজ্ঞাপন
NBU- এর সঙ্গে যুক্ত কলেজ গুলির ছাত্রছাত্রী, যারা Political Science Major / Minor নিয়ে পড়ছো, তোমরা যদি 2nd Semester ; Political Science Major / Minor-এর সম্পূর্ণ সিলেবাসের সকল ইউনিটের PDF Note নিতে চাও, তাহলে আজই যোগাযোগ করো👇
+91838898672 নম্বরে।
৬) ষষ্ঠত : ভারতের মিশ্র ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সমর্থন এবং সংরক্ষণ করা।
৭) সপ্তমত : বনভূমি, হ্রদ, নদনদী ও বন্যপ্রাণী সহ প্রাকৃতিক পরিবেশকে সংরক্ষণ এবং এর উন্নয়ন করা। এবং সেইসঙ্গে বন্যনারীদের প্রতি মমত্ববোধ পোষণ কর।
৮) অষ্টম : বৈজ্ঞানিক মানসিকতা, মানবিকতা ও সংস্কারমুখী দৃষ্টিভঙ্গির প্রসার সাধন করা।
৯) নবম : জনসাধারণের সম্পত্তি সংরক্ষণ করা এবং হিংসা বর্জন করা।
১০) দশম : জাতির উন্নতির জন্য ব্যক্তিগত এবং যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত সকল কর্ম ক্ষেত্রে উৎকর্ষের ব্যাপারে সচেতন হওয়া।
১১) একাদশ : পিতা মাতা বা অভিভাবকদের ৬ থেকে ১৪ বছর বয়সী সকল শিশুদের শিক্ষার সুযোগ করে দিতে হবে।
** আরও পড়ে দেখুন ; লোকসভার স্পিকারের উপর A1 নোট
** এটাও পড়ে দেখুন👉 ; সরকারি গাণিতিক কমিটির A2Z
▪ মৌলিক কর্তব্যের বৈশিষ্ট্য / সীমাবদ্ধতা
ভারতীয় সংবিধানে নাগরিকদের জন্য যে ১১ টি মৌলিক কর্তব্যের কথা বলা হয়েছে, সেই মৌলিক কর্তব্যের কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন-
▪ প্রথমতঃ কিছু কিছু মৌলিক অধিকার ভারতে বসবাসকারী বিদেশীদের জন্য প্রযোজ্য,মৌলিক কর্তব্য কিন্তু সেরকম নয়। মৌলিক কর্তব্য শুধুমাত্র ভারতীয় নাগরিকদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
▪ দ্বিতীয়তঃ মৌলিক অধিকার যেমন নাগরিকদের ব্যক্তিত্বের বিকাশে সাহায্য করে, ঠিক সেরকমই মৌলিক কর্তব্য নাগরিকদের নীতি পরায়ন বা দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে সহায়তা করে। বলতে গেলে মৌলিক কর্তব্য নাগরিকদের সঠিক পথে চালনা করে।
▪ তৃতীয়তঃ মৌলিক কর্তব্য গুলি হল অ-ন্যায় বিচার যোয্য। এর অর্থ হল কোনো নাগরিক যদি মৌলিক কর্তব্য পালনের ব্যর্থ হয় তাহলে সেটা তার জন্য আইনত শাস্তি যোগ্য হবে না। আবার মৌলিক কর্তব্য কিন্তু বিচার বিভাগ দ্বারা আইনত প্রয়োগযোগ্যও নয়।
▪ চতুর্থঃ মৌলিক কর্তব্য নাগরিকদের দুই ধরনের দুই ধরনের কর্তব্য পালনের কথা বলে। নৈতিক কর্তব্য হিসেবে রয়েছে, যেমন ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে ঐক্য এবং ভ্রাতৃত্ববোধের বিকাশ সাধন করা, নারীদের মর্যাদাহানী কর সমস্ত জিনিস বর্জন করা, জীবিত প্রাণীদের প্রতি মমত্ববোধ পোষণ করা ইত্যাদি। অন্যদিকে রয়েছে সংবিধান মান্য করা, জাতীয় পতাকা,জাতীয় সংগীতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা ইত্যাদি।
▪ মৌলিক কর্তব্যের গুরুত্ব ;
▪ প্রথমতঃ দায়িত্বশীল্ল সমাজ গঠন ; মৌলিক কর্তব্যের প্রথম এবং উল্লেখযোগ্য গুরুত্ব হচ্ছে- মৌলিক কর্তব্যের দ্বারা প্রত্যেক ভারতীয় নাগরিককে তার দেশের প্রতি অবশ্য পালনীয় কর্তব্য সম্পর্কে অবগত এবং সচেতন এবং দেশের প্রতি কিছু করার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়। এবং এর মাধ্যমে মৌলিক কর্তব্যে এক দায়িত্বশীল সমাজ গঠনে সহায়তা করে।
▪ দ্বিতীয়তঃ নাগরিকদের সঠিক পথে চালানোর ক্ষেত্রে ; মৌলিক কর্তব্য একদিকে নাগরিকদের যেমন কিছু নাগরিক কর্তব্য পালনের কথা বলে, ঠিক সেরকমই কিছু নৈতিক দায়িত্ব পালনের কথাও বলে। এভাবে মৌলিক কর্তব্য নাগরিকদের সঠিক পথে চালানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে।
▪ তৃতীয়তঃ দেশের উন্নয়নে ; মৌলিক কর্তব্যে বলা হয়েছে নাগরিকরা যেন সংবিধান মান্য করে এবং সেই সঙ্গে ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে ঐক্য এবং ভ্রাতৃত্ব বোধের বিকাশ সাধন করে। নাগরিকরা এই কর্তব্য পালনের মাধ্যমে দেশের মধ্যে শান্তি শৃঙ্খলা এবং ঐক্য বজায় রাখে এবং এই ঐক্য মধ্যে দিয়েই দেশের উন্নতি সম্ভব হয়।
▪ চতুর্থঃ জাতির উন্নয়নের ক্ষেত্রে; মৌলিক কর্তব্যের গুরুত্ব রয়েছে। কারণ মৌলিক কর্তব্যের মধ্যে শিক্ষার প্রসারের বিষয়টি যুক্ত। সর্বশেষ মৌলিক কর্তব্যে বলা হয়েছে- ৬ থেকে ১৪ বছর বয়স্ক সকল শিশুর যেন প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয় নাগরিকরা এই কর্তব্য পালনের মধ্য দিয়ে জাতির শিক্ষার প্রসার ঘটায় এবং শিক্ষার প্রসার-ই জাতির উন্নয়ন ঘটায়।
▪ পঞ্চমঃ জাতীয় ঐক্য স্থাপন এবং জাতীয় অখন্ডতা রক্ষার ; ক্ষেত্রেও মৌলিক কর্তব্যের গুরুত্ব রয়েছে। কারণ দ্বিতীয় এবং তৃতীয় মৌলিক কর্তব্যে বলা হয়েছে- নাগরিকরা যেন দেশের সার্বভৌমত্ব, ঐক্য এবং সংহতি রক্ষা করে। সেইসঙ্গে দেশকে রক্ষা করা এবং জাতির প্রয়োজনেও যেন নিজেকে আত্মনিয়োগ করে।।
*** এটা পড়ে দেখুন ; কেন্দ্রীয় মন্ত্রীপরিষদের গঠন ও কার্যাবলী সম্পর্কে সেরা নোট
*** এটাও পড়তে পারেন 👉 ; ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের খুটিনাটি বিষয়
** আরও পড়ে দেখুন👉 : ভারতীয় সংবিধানের উল্লেখযোগ্য ১৩টি বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা
** আরও পড়ে দেখুন ; লোকসভার স্পিকারের উপর A1 নোট
** এটাও পড়ে দেখুন👉 ; সরকারি গাণিতিক কমিটির A2Z
*** যেকোনো প্রয়োজনে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন নিম্নলিখিত উপায়ে।