গণপরিষদের গঠন, উদ্দেশ্য এবং কার্যাবলী সম্পর্কে আলোচনা করো। || Composition, Objectives & Functions Of Constituent Assembly
গণপরিষদের গঠন সম্পর্কে জানার আগে আমাদের গণপরিষদ গঠনের আগেকার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস জেনে নেওয়া প্রয়োজন। ভারতের স্বাধীনতা লাভের বহু আগে ভারতীয়দের দ্বারা গণপরিষণ গঠনের দাবি উঠেছিল। সর্বপ্রথম নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বা মানবেন্দ্রনাথ রায় ১৯৩৪ সালে প্রথম গণপরিষদ গঠনের কথা বলেছিলেন। এরপর কংগ্রেস একই দাবি তুলতে থাকে। ভারতীয়দের এই সমস্ত দাবির বহু পরে ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে বড়লাট লিনলিথগো তার অগাস্ট প্রস্তাবে প্রথম বলেন যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে ভারতীয় প্রতিনিধিদের নিয়ে একটা গণপরিষদ গঠন করা হবে। এরপর ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ক্রিপস মিশনেও গণপরিষদ গঠনের কথা বলা হয়। কিন্তু ক্রিপস মিশনেও ভুলত্রুটি থাকায় জাতীয় কংগ্রেস এবং মুসলিম লীগ ক্রিপস মিশন গ্রহণ করেনি। সবশেষে ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের নৌ বিদ্রোহের পর ভারতে মন্ত্রী মিশন বা ক্যাবিনেট মিশন আসে। ক্যাবিনেট মিশনে আবার বলা হয় যে ভারতের সংবিধান রচনার জন্য ভারতীয় প্রতিনিধিদের নিয়ে এক গণপরিষণ গঠন করা হবে এবং সেই গণপরিষদ ভারতের নতুন সংবিধান রচনা করবে। জাতীয় কংগ্রেস এবং মুসলিমদের উভয়ই ক্যাবিনেট মিশনের সুপারিশ মেনে নেয়। এরপর ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের শেষ দিকে মন্ত্রী মিশন বা ক্যাবিনেট মিশনের পরিকল্পনা অনুসারে ভারতীয় প্রতি নিধিদের নিয়ে গণপরিষদ গঠিত হয়।।
[ গণপরিষদের গঠন ; Formulation Of Constituent Assembly ]
ক্যাবিনেট মিশনের চারটি মূল নীতির ভিত্তিতে গণপরিষণ গঠন করা হয়।
▪ প্রথমত : দেশীয় রাজ্যগুলি এবং ব্রিটিশ শাসিত প্রদেশ গুলি তাদের জনসংখ্যার অনুপাতে গণপরিষদে আসন পাবে। প্রতিটি প্রদেশ ১০ লক্ষ জনগণের জন্য গণপরিষদে একজন করে সদস্য পাঠাতে পারবে।
▪ দ্বিতীয়ত ; গণপরিষদের মোট আসন সংখ্যা ধরা হয় ৩৮৯। এর মধ্যে ব্রিটিশ শাসিত প্রদেশের জন্য ২৯৬ এবং বাকি ৯৩ টি আসন থাকবে দেশীয় রাজ্যগুলির প্রতিনিধিদের জন্য। ২৯৬টি আসনের মধ্যে আবার ৭৮ টি আসন মুসলিমদের জন্য, ৪টি আসন শিখদের জন্য এবং ২১০ টি আসন (মুসলিম এবং শিখ বাদে) সাধারণের জন্য সংরক্ষিত থাকবে।
▪ তৃতীয়ত প্রতিটি প্রাদেশিক আইনসভায় অবস্থিত সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা একক হস্তান্তরযোগ্য সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের গণপরিষদে তাদের সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি পাঠাতে পারবেন।
▪ চতুর্থ বলা হয় যে, দেশীয় রাজ্যগুলি থেকে যে ৯৩ জন সদস্য পাঠানোর কথা বলা হয়, তার মধ্যে ৫০ শতাংশ প্রতিনিধি হবেন মনোনীত এবং বাকি ৫০ সদস্য প্রতিনিধি হবেন নির্বাচিত।
যাই হোক এরপর ক্যাবিনেট মিশনের প্রস্তাব অনুসারে ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় উল্লেখ্য সে সময় ভারতের মাত্র ১৪ শতাংশ মানুষের কাছেই ভোট আধিকার ছিল সর্বসাধারণের ভোটাধিকার তখন ছিল না। সেই নির্বাচনে ২৯২ টি প্রাদেশিক আসনের মধ্যে কংগ্রেস লাভ করে ২০৮ টি আসন, মুসলমানদের জন্য সংরক্ষিত ৭৮টি আসনের মধ্যে মুসলিম লীগ ৭৩ টি আসন জয়লাভ করে এবং কংগ্রেস টিকিটে চারজন মুসলমান এবং একজন শিখ নির্বাচিত হন। বাকি আসন গুলো অন্যান্য ক্ষুদ্র দলগুলি লাভ করে। এইভাবে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণপরিষদ গঠন করা হয়।।
এখানে আরেকটা বিষয় উল্লেখ করতে হয়। সেটা হচ্ছে গণপরিষণ গঠনের পর কিন্তু মুসলিম লীগ এবং জাতীয় কংগ্রেসের মধ্যে কোন সুসম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। মুসলিম লীগ একত্রে কাজ করায় আপত্তি জানায়। এর মধ্যে আবার লর্ড ওয়াভেল ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দের ২০ই নভেম্বর ঘোষণা করে যে আগামী ৯ ডিসেম্বর কনস্টিটিউশন হলে গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। এরপর ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ৯ ডিসেম্বর গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। সেই অধিবেশনে ২০৭ জন প্রতিনিধি বা সদস্য উপস্থিত ছিলেন সেখানে কংগ্রেস থেকে নির্বাচিত মুসলিম প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকলেও মুসলিম লীগ সেখানে যোগদান করেনি মুসলিমদের ছাড়াই গণ পরিষদের কাজ শুরু হয়।
গণপরিষদ সম্পর্কে আরো কিছু বিষয় উল্লেখযোগ্য তথ্য ; যেমন-
প্রথমতঃ যে সময় গণপরিষণ গঠন করা হয় সেই সময় ভারত স্বাধীনতা লাভ করেনি। সুতরাং আমরা বলতে পারি না যে গণপরিষদ প্রথম দিকে সার্বভৌম গণপরিষদ ছিল। গণপরিষদ তার সার্বভৌমিকতা লাভ করেছিল ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই আগস্ট। দ্বিতীয়তঃ যে সময় গণপরিষদ গঠন করা হয়েছিল সেই সময় ভারতের শুধুমাত্র ১৪ শতাংশ মানুষের কাছেই ভোট অধিকার ছিল। সুতরাং এটাও বলা যায় না যে গণপরিষদ সর্বসাধারণের নির্বাচিত প্রতিনিধিত্ব নিয়ে গঠিত হয়েছিল।
▪ গণপরিষদ গঠনের উদ্দেশ্য কী ছিল? || Objectives Of Constituent Assembly
▪ গ্রিনভিল অস্টিনের মতে গণপরিষদের প্রধান লক্ষ্য ছিল এমন একটি খসড়া সংবিধান রচনা করা যা সামাজিক বিপ্লবের চরম লক্ষ্যকর অর্জন করতে পারবে।
▪ ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পন্ডিত জহরলাল নেহেরু বলেছিলেন, গণপরিষদের লক্ষ্য হবে একটি নতুন সংবিধান রচনা করার মাধ্যমে ভারতবর্ষকে স্বাধীন করা এবং সেই সঙ্গে স্বাধীন ভারতবর্ষের অন্ন এবং বস্ত্রহীন মানুষের জন্য অন্নবস্ত্র এবং বাসস্থান সঙ্গে প্রতিটি ভারতবাসীর আত্ম বিকাশের জন্য সর্বাধিক সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা।
▪ ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ বলেছিলেন গণপরিষদের লক্ষ্য হবে ভারতবাসীর দুঃখ- দারিদ্র্যের পরিসমাপ্তি ঘটানো, শোষণ ও বৈষম্যের অবসান ঘটানো এবং সুন্দর জীবনের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করা।
▪ আবার ভারতের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন বলেছিলেন, গণপরিষদের মূল লক্ষ্য হবে জাতি-ধর্ম-সম্প্রদায় নির্বিশেষে প্রতিটি ভারতবাসীর মৌলিক চাহিদাগুলো বা প্রয়োজনগুলো পূরণ করা।।
সুতরাং বলা যায় শুধুমাত্র সংবিধান রচনা করা নয়, সংবিধান রচনার মধ্যে দিয়ে ভারতবাসীর অর্থনৈতিক,সামাজিক,রাজনৈতিক চাহিদা পূরণ এবং স্বাধীনতা সংরক্ষণ করাও ছিল গণপরিষদের লক্ষ্য।।
গণপরিষদের কার্যাবলী সম্পর্কে আলোচনা || Functions Of Constituent Assembly
গণপরিষদ প্রথমত ভারতবর্ষের নতুন সংবিধান রচনার জন্যই গঠিত হয়েছিল। কিন্তু গণপরিষদের পঞ্চম অধিবেশনের পর গণপরিষদ সার্বভৌম গণপরিষদে পরিণত হয় এবং তারপর থেকে গণপরিষদ ভারতের প্রথম আইন সভাতেও পরিণত হয়েছিল। অর্থাৎ গণপরিষদকে দুই ধরনের কাজ করতে হয়েছিল। প্রথমত ভারতের সংবিধান রচনা করা এবং দ্বিতীয়ত আইন সংক্রান্ত কার্যাবলী সম্পাদন করা।
ভারতীয় গণপরিষদ এই দুই ধরনের কাজ সুষ্ঠুভাবে করার জন্য বিভিন্ন স্থায়ী কমিটি বা স্ট্যান্ডিং কমিটিও গঠন করে। যেমন Steering Committee, Drafting Committee, Union & Provincial Constitutional Committee Etc.
১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে শুরু করে ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত গণপরিষদের মোট পাঁচটি অধিবেশন হয়েছিল। পাঁচটি অধিবেশনের মধ্য দিয়ে গণপরিষদের উল্লেখযোগ্য কাজগুলো হয়।
▪ গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন ;
১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ৯ ডিসেম্বর থেকে ২৩ শে ডিসেম্বর পর্যন্ত গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন চলে। গণপরিষদের প্রথম অধিবেশনে জে.বি কৃপালিনীর প্রস্তাবক্রমে সদস্যদের মধ্যে সবচেয়ে বয়স্ক সদস্য সচ্চিদানন্দ সিংহ কে গণপরিষদের প্রথম অস্থায়ী সভাপতি হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।
▪ গণপরিষদের দ্বিতীয় দিনের অধিবেশন অর্থাৎ ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১১ই ডিসেম্বরের অধিবেশনে ডক্টর রাজেন্দ্র প্রসাদকে গণপরিষদের স্থায়ী সভাপতি হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।
▪ ১৩ই ডিসেম্বর গণপরিষদে পন্ডিত জহরলাল নেহেরু সংবিধানের উদ্দেশ্য সংক্রান্ত প্রস্তাব (The Objectives Resolution) পেশ করেন। পরবর্তীকালে সেই প্রস্তাবটি ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনা হিসেবে গ্রহণ করা হয়।
▪ এছাড়াও ২১শে ডিসেম্বর এম কে মুন্সি গণ পরিষদের কার্য পরিচালনা সংক্রান্ত কমিটির রিপোর্ট পেশ করেন এবং সেই রিপোর্টের গণপরিষদের স্থায়ী সভাপতি থেকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে অভিহিত করার সুপারিশ করা হয়।
▪ গণপরিষদের দ্বিতীয় অধিবেশন ;
এটা ১৯৪৭ সালের ২৫ শে জানুয়ারি পর্যন্ত। এই পরিবেশনে কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ কমিটি যেমন কার্যনিবার্হক কমিটি (Steering Committee), কেন্দ্রীয় ক্ষমতা সম্পর্কিত কমিটি এবং মৌলিক অধিকার সম্পর্কিত পরামর্শদাতা কমিটি এবং সংখ্যালঘু সম্পর্কিত উপদেষ্টা কমিটি গঠিত হয়।
▪ গণপরিষদের তৃতীয় অধিবেশন ;
১৯৪৭ সালের ২২ শে এপ্রিল থেকে ২রা মে পর্যন্ত চলে। এই অধিবেশনে মৌলিক অধিকার সম্পর্কিত পরামর্শদাতা কমিটি, কেন্দ্রীয় ক্ষমতা সম্পর্কিত কমিটি এবং অন্যান্য কমিটির প্রতিবেদন পেশ করা হয় এবং সেই প্রতিবেদনের উপর আলাপ-আলোচনা করা হয়।
তবে এই অধিবেশনেও কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ কমিটি যেমন কেন্দ্রীয় শাসনতন্ত্র সম্পর্কিত কমিটি বা ইউনিয়ন কনস্টিটিউশন কমিটি (Union Constitutional Committee) এবং প্রাদেশিক শাসনতন্ত্র সম্পর্কিত কমিটি বা প্রভিন্সিয়াল কনস্টিটিউশনাল কমিটি (Provincial Constitutional Committee) গঠন করা হয়।।
▪ গণপরিষদের চতুর্থ অধিবেশন ;
১৪ জুলাই থেকে ২২ শে জুলাই পর্যন্ত এই অধিবেশন চলে। এই অধিবেশনে ভারতের জাতীয় পতাকার পরিকল্পনা স্থির করা হয় এবং বিভিন্ন কমিটির রিপোর্ট নিয়ে এই অধিবেশনে আলাপ আলোচনা করা হয়।।।
▪ গণপরিষদের পঞ্চম অধিবেশন ;
গণপরিষদের দ্বিতীয়,তৃতীয় এবং চতুর্থ অধিবেশনের পর ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে গণপরিষদের পঞ্চম অধিবেশন বসে। পঞ্চম অধিবেশন হয়েছিল ১৪ই আগস্ট থেকে ২৯ আগস্ট পর্যন্ত। ১৪ই আগস্ট মধ্যরাতে এক বিশেষ অধিবেশন বসে।সেই অধিবেশনেই লর্ড মাউন্ট ব্যাটেন কে ভারতের সর্বশেষ গভর্নর জেনারেল হিসেবে নিযুক্ত করা হয় এবং ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করা হয় পন্ডিত জহরলাল নেহেরুকে।
যাই হোক পঞ্চম অধিবেশন গণপরিষদ সার্বভৌম গণ পরিষদের পরিণত হয়। পঞ্চম অধিবেশনে গণপরিষদের বিভিন্ন কমিটির প্রতিবেদনে বিস্তারিত আলাপ আলোচনা করা হয়। একটি রিপোর্টে বলা হয় যে এখন থেকে গণপরিষদ সংবিধান রচনার সঙ্গে সঙ্গে আইনসভা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। সেই সুপারিশের ভিত্তিতে গণপরিষদ ১৯৪৭ সালের ১৭ই ডিসেম্বর থেকে ভারতের প্রথম আইনসভা হিসেবে কাজ করতে শুরু করে এবং সেই আইনসভার প্রথম সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন গণেশ বাসুদেব মাভলঙ্কার।
সংবিধান রচনার জন্য খসড়া কমিটি বা ড্রাফটিং কমিটি গঠন ও কার্যাবলী (Drafting Committee)
যাইহোক গণপরিষদের পঞ্চম অধিবেশনে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ২৯ শে আগস্ট, ভারতের সংবিধান রচনার জন্য একটি ড্রাফটিং কমিটি বা খসড়া কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটির সদস্য সংখ্যা ছিল ৭ জন। সদস্যদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন বি.এল মিত্র, আল্লাদী কৃষ্ণস্বামী আইয়ার, এন. গোপালস্বামী আঙ্গেয়ার, কে.এম মুন্সি, সৈয়দ মোহাম্মদ শাহদুল্লাহ প্রমুখ। খসড়া কমিটির সভাপতি ছিলেন ডঃ বি আর আম্বেদকর ডঃ বি আর আম্বেদকর।
গণপরিষদের পঞ্চম অধিবেশনে খসড়া কমিটির গঠন করা হলেও সেই সময় কিন্তু সংবিধান রচনার কাজ শুরু হয়নি। শুরু হয়েছিল পরবর্তী অধিবেশনে।
খসড়া কমিটি ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর মাসের ৪ তারিখে খসড়া সংবিধান রচনার কাজ শুরু করে। এরপর এক বছর কাজ করার পর ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ড্রাফটিং কমিটি গণপরিষদে সংবিধানের একটা খসড়া পেশ করে। কিন্তু প্রথম খসড়া ওপর নানা বিতর্ক হয় এবং খসড়া কমিটি, সংবিধানের নতুন খসড়া প্রণয়নের কাজ শুরু করে। এরপর তারা দীর্ঘ কাজের ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ৪ই নভেম্বর গণপরিষদে সংবিধানে একটি নতুন খসড়া পেশ করে। সেই খসড়া জনগণের কাছে প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়। খসড়ার ওপর জনগণের আলাপ আলোচনা, বিতর্ক, সংশোধনী প্রস্তাব এবং সুপারিশের জন্য ৮ মাসের সময় দেওয়া হয়। সেই আট মাসের মধ্যে সেই খসড়ার উপর নানা ধরনের সংশোধনী প্রস্তাব এবং সুপারিশ আসে। সেই খসরায় প্রথমে ৩৫১ টি ধারা এবং ১৩ টি তপশীল ছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে বিভিন্ন আলাপ-আলোচনা,সংশোধনী প্রস্তাব এবং সুপারিশের রীতিতে সেই খসড়া সংশোধন করে করে সেটাতে ৩৯৫টি ধারা এবং আটটি তফসিল অনুমোদিত হয়। এরপর ১৯৪৯ সালে ২৬ শে নভেম্বর তারিখে গণপরিষদে সেই সংবিধানের খসড়া গৃহীত হয়।
গণপরিষদের সংবিধান রচনা করতে মোট সময় লেগেছিল ২ বছর ১১ মাস ১৮ দিন এই দীর্ঘ। সংবিধান রচনার প্রধান দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ডক্টর বি.আর. আম্বেদকরের উপর। তিনি বিভিন্ন দেশের সংবিধান পড়ে বুঝে সেখান থেকে গ্রহণীয় উপাদান গুলো আমাদের সংবিধানে যুক্ত করেছেন। এজন্য ডক্টর বি.আর.আম্বেদকর কে ভারতীয় সংবিধানের জনক বলা হয়।
যাইহোক গণপরিষদের সর্বশেষ অধিবেশন বসে ছিল সেটা হয়েছিল ১৯৫০ সালের ২৪শে জানুয়ারি এই তারিখেই গণপরিষদের সদস্যগণ সংবিধানের হিন্দি এবং ইংরেজি উভয় কপিতেই স্বাক্ষর করেন প্রশ্ন উল্লেখ করা দরকার যে গণপরিষদের এই শেষ অধিবেশনের দিনই ভারতীয় জাতীয় সংগীত এবং জাতীয় পতাকা এবং কমনওয়েলথের সদস্যপদ গ্রহণের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত অনুমোদন করা হয়েছিল।
** ২৬শে জানুয়ারি দিনটিকে প্রজাতন্ত্র দিবস হিসাবে পালন করা হয়ে কেন?
এছাড়া গণপরিষদের সর্বশেষ অধিবেশনে ডক্টর রাজেন্দ্র প্রসাদ কে ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচন করা হয় এবং ১৯৫০ সালের ২৬শে জানুয়ারি থেকে ভারতের সংবিধান কার্যকর হবে বলে ঘোষণা করা হয়।। তাই ২৬ শে জানুয়ারি দিনটকে আমরা প্রজাতন্ত্র দিবস বা Republic Day হিসেবে বা সাধারণতন্ত্র দিবস হিসেবে উদযাপন করি। এই দিনে সংবিধান কার্যকর করার পেছনে একটা বিশেষ কারণ ছিল। ১৯৩০ সালের ২৬ শে জানুয়ারি তারিখেই জাতীয় কংগ্রেস প্রথম স্বাধীনতা দিবস পালন করেছিল এবং ঘোষণা করে যে এখন থেকে এই দিনেই তারা স্বাধীনতা দিবস পালন করবে। সেজন্য এই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্যই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে ২৬ শে জানুয়ারি ভারতীয় সংবিধান কার্যকর হবে।।
ভারতীয় সংবিধান সম্পর্কে আরও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় রয়েছে যেমন ভারতীয় সংবিধানের হিন্দি এবং ইংরেজি কপি নিজের হাতে লিখেছিলেন প্রেমবিহারী নারায়ন রায় যাদব এবং সংবিধানের বেশিরভাগ ছবি নিজের হাতে অঙ্কন করেছিলেন নন্দলাল বসু এবং সংবিধানের যে প্রস্তাবনা রয়েছে সেই প্রস্তাবনার ছবি নিজে হাতে অঙ্কন করেছিলেন বেওহর রাম মনোহর সিনহা।
** চাইলে এটাও পড়তে পারো👉 ; ভারতীয় পার্লামেন্টের গঠন ও কার্যাবলী সম্পর্কে সেরা নোট
** আরও পড়ে দেখুন ; লোকসভার স্পিকারের উপর A1 নোট
** আরও জানো ; মূখ্যমন্ত্রীর যোগ্যতা, ক্ষমতা ও কার্যাবলী সম্পর্কে A1 নোট
**** একটা সুন্দর নোট দেখে নাও : রাষ্ট্রপতির যোগ্যতা, নির্বাচন, ক্ষমতা ও কার্যাবলী সম্পর্কে