ডেলর কমিশন গঠন ও তার রিপোর্ট
শিক্ষার্থীরা যে শিক্ষা অর্জন করে সেই শিক্ষা অর্জনের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য কী হবে এই প্রশ্ন সবসময়ই দেখা গেছে। প্রাচীনকালে শিক্ষার লক্ষ্য ছিল এক এবং মধ্যে যুগে শিক্ষার লক্ষ্য হয়েছে আরেক। তবে আধুনিক বর্তমান যুগে শিক্ষার মূল লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য কী হওয়া উচিত এই উত্তর পাওয়া গিয়েছিল ডেলরস কমিশনের রিপোর্টে।
১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে UNESCO বিশ্বব্যাপী শিক্ষার প্রসার এবং উন্নতি ঘটনার জন্য জ্যাক ডেলরের নেতৃত্বে ১৪ জন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিশন গঠন করে যার নাম হয় ডেলার কমিশন।। ডেলর কমিশনে ভারতীয় সদস্য হিসেবে ছিলেন করণ সিং। এরপর ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে জ্যাক ডিলারের নেতৃত্বে ইউনেস্কোর প্যারিসে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই সম্মেলনে ডেলের কমিশন শিক্ষার লক্ষ্য কী হওয়া উচিত এই বিষয়ে একটি প্রতিবেদন বা রিপোর্ট পেশ করে। ডেলর কমিশনের রিপোর্টে শিক্ষার চারটি দিকের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়,যেগুলোকে বলা হয়েছিল শিক্ষার চারটি স্তম্ভ (Four Pillars Of Education)। ডেলর কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী শিক্ষার মূল চারটি লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য হলো-১) প্রথমত জানার জন্য শিক্ষা ; ২) দ্বিতীয়ত কর্মের জন্য শিক্ষা ; ৩) তিতীয়ত একত্রে বসবাসের জন্য শিক্ষা ; ৪) এবং চতুর্থ প্রকৃত মানুষ হওয়ার জন্য শিক্ষা।
▪ ডেলর কমিশন অনুযায়ী শিক্ষার মূল চারটি স্তম্ভ || Four Main Pillars Of Education
ডেলর কমিশনের রিপোর্টে বলা হয়েছিল শিক্ষার মূল চারটি লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য হবে-
- প্রথমত জানার জন্য শিক্ষা ;
- দ্বিতীয়ত কর্মের জন্য শিক্ষা ;
- তৃতীয়ত একত্রে বসবাসের জন্য শিক্ষা ;
- এবং চতুর্থ মানুষ হওয়ার জন্য শিক্ষা।
▪ প্রথমত ; জানার জন্য শিক্ষা ; শিক্ষার প্রধান এবং প্রথম স্তম্ভ হল জানার জন্য শিক্ষা। জানা বলতে কোনো একটি বিষয়ে বিশেষ জ্ঞান অর্জন করাকে বোঝায়। অজ্ঞানতা আমাদের অন্ধকারে ডুবিয়ে রাখে অন্যদিকে জ্ঞান আমাদের সেই অন্ধকার থেকে বের করে আলোর দিকে নিয়ে আসে। জ্ঞান ছাড়া আমাদের সম্পূর্ণ বিকাশ সম্ভব নয়। জ্ঞানেই মুক্তি এবং জ্ঞানেই জীবনের সার্থকতা। তাই জীবনে আজীবন জ্ঞান অর্জন প্রয়োজন।।
▪ দ্বিতীয়ত ; কর্মের জন্য শিক্ষা ; প্রাচীনকালে শিক্ষা শুধুমাত্র জ্ঞান অর্জন করার জন্য হতো কিন্তু বর্তমানে জ্ঞান শুধুমাত্র খাতা কলমে নয় বরং হাতে-কলমে প্রয়োগ করেও দেখার বিষয়। সঠিক শিক্ষা প্রয়োগের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর মধ্যে থাকা কর্মদক্ষতার সঠিক বিকাশ ঘটানো এবং শিক্ষার্থীকে কর্মক্ষম বা উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন করে তোলার অর্থ হলো কর্মের জন্য শিক্ষা। শিক্ষার এই উদ্দেশ্যটি বৃত্তিমূলক শিক্ষার সঙ্গে জড়িত। এই শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের এমনভাবে তৈরি করা যাতে সে ভবিষ্যতে বিভিন্ন কাজে দক্ষতার সঙ্গে নিযুক্ত হয়ে নিজের জীবিকা নির্বাহ করার মাধ্যমে সমাজ এবং দেশের কাজে আসতে পারে।
▪ তৃতীয়তঃ একত্রে বসবাসের জন্য শিক্ষা ; একত্রে বসবাসের জন্য শিক্ষা বলতে বোঝায় সমাজে মিলেমিশে সকলে একসাথে বসবাস করা। রাষ্ট্র বিজ্ঞানের জনক অ্যারিস্টটল বলেছিলেন- যে সমাজে বসবাস করে না হয় সে ভগবান আর না হয় সে পশু। ব্যক্তির বিকাশের জন্য শুধুমাত্র পুঁথিগত শিক্ষা নয় এই সমাজও গুরুত্বপূর্ণ। সমাজ বক্তির বিভিন্ন ধরনের আশা আকাঙ্ক্ষা বা চাহিদা পূরণ করে। সমাজ ছাড়া একলা থাকা অসম্ভব নয় কিন্তু তা কঠিন। তাই সমাজের প্রয়োজনীয়তা, সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার জ্ঞান দেওয়ায় শিক্ষার এক গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য।
▪ চতুর্থঃ প্রকৃত মানুষ হওয়ার শিক্ষা : শিক্ষার উপরোক্ত তিনটি উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ অর্থহীন হয়ে যাবে যদি আমরা শিক্ষার এই চতুর্থ উদ্দেশ্যটিকে ভুলে যাই। এই দেশ, বিশ্ব সমাজ তখনই সুন্দর হবে যখন সঠিক নীতিবোধ, সঠিক মূল্যবোধ সম্পূর্ণ মানুষ তৈরি হবে। শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সঠিক জ্ঞান সম্পন্ন তাদের মধ্যে নীতিবোধ এবং মূল্যবোধ যুক্ত করে তুলতে হবে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রকৃত মনুষ্যত্ব বোধের জাগরণ ঘটানো, যাতে সে নিচের দেশ এবং বিশ্ব সমাজের কল্যাণের কথা ভাবতে পারে,; সেটাই হবে প্রকৃত মানুষ হওয়া শিক্ষা।
*** এটাও পড়ো👉 : প্রকৃতিবাদী শিক্ষা দর্শনের উপর টপারের লেখা নোট