জানুন উপভোক্তা বা ক্রেতা সুরক্ষা আইনের খুটিনাটি বিষয়

Ajit Rajbanshi
0
জানুন ১৯৮৬ এবং ২০১৯-এর ক্রেতা সুরক্ষা আইনের খুটিনাটি বিষয়




উপভোক্তা বা ক্রেতা সুরক্ষা আইন ১৯৮৬ (Consumer Protection Act- 1986) 

▪ বিক্রেতার দ্বারা বেশি মূল্যে পন্য বা পরিষেবা বিক্রয় করা. ভুল বা ক্ষতিকর পণ্য বা পরিসেবা দেওয়া, ওজনের কারচুপি, ওয়ারেন্টি কার্ড দেওয়ার পরেও পরিষেবা না দেওয়ার মতো ঘটনা যেখানে ভোক্তাকে ঠকানো হয়েছে, সেই ধরনের ঘটনাগুলো বন্ধ করার জন্য বা ভোক্তার স্বার্থরক্ষার জন্য ভারতীয় পার্লামেন্টে ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দের ৯ ডিসেম্বর উপভক্তা সুরক্ষা বিল বা কনজিউমার প্রোটেকশন বিল উত্থাপন করা হয়। ভারতীয় উপভোক্তাদের স্বার্থ সুরক্ষার জন্য বিলটি ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দের ২৪ ডিসেম্বর ভারতীয় সংসদে পাশ হয়ে বিলটি আইনে পরিনত হয়। ১৯৯৩, ১৯৯৮ ও ২০০২ খ্রিস্টাব্দে তিন দফা সংশোধনের পর ২০০৩ খ্রিস্টাব্দের ১৫ মার্চ থেকে আইনটি লাগু হয়।

▪ Consumer Protection Act শেষবার সংশোধিত হয় ২০১৯ সালে। 

▪ এই আইনটি কিন্তু মূলত ক্ষতিপূরণমূলক, শাস্তিমূলক নয়। অর্থাৎ কোনো পণ্য বা পরিষেবা কিনে ক্রেতা যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে তার জন্য বিক্রেতাকে ক্রেতার হাতে ক্ষতিপূরণ তুলে দেওয়ার নির্দেশ দিতে পারে এই আইন, তাকে শাস্তি দিতে পারে না। 

▪ উপভোক্তা সুরক্ষা আইন অনুসারে কোনো ভোক্তা চাইলে নিজেই কোন উকিল ছাড়াই মামলা করতে পারবেন। 

▪ উপভোক্তা সুরক্ষা আইনে খুবই দ্রুত মামলার নিষ্পত্তি করা হয় বা ন্যায় বিচার প্রদান করা হয়। 

▪ ১৯৮৬ সালের উপভোক্তা সুরক্ষা আইনে গঠন করা কিছু কমিটি / বিভাগ ;

▪ 1. ভোক্তা অধিকারের গ্রুপ (Group of consumer rights) ; এই অধিকার ভোক্তাদের অনেক ধরনের অধিকার দেয়। যেমন- সুরক্ষা, তথ্য, পছন্দ, চিকিৎসা, শিক্ষা এবং প্রতিনিধিত্ব ইত্যাদি।

 2. কনজিউমার সুরক্ষা কাউন্সিলের (Consumer Protection Councils) ;; কনজিউমারকে আদালতে কী ভাবে মামলা দায়ের করতে হয়, সে সম্পর্কে রাস্তা দেখায় কনজিউমার সুরক্ষা কাউন্সিল।

 3. বিধানের ক্ষতিপূরণমূলক প্রকৃতি - ভোক্তাদের সাহায্য করার জন্য ভোক্তা সুরক্ষা আইনে বিভিন্ন ধরনের আইন করা হয়েছে।  শুধুমাত্র ভোক্তারা এই সুবিধা গ্রহণ করে।  ভোক্তা চাইলে তাকে অতিরিক্ত সহায়তা প্রদান করা যেতে পারে।  এই আইনের বিধানের প্রকৃতি হল ক্ষতিপূরণমূলক বা অতিরিক্ত সাহায্য প্রদান।  ভোক্তাদের যে কোনো আইনের সুবিধা গ্রহণের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে।

 4. তিন স্তরের অভিযোগ পদ্ধতি - ভোক্তারা ভোক্তার বিরুদ্ধে সংঘটিত প্রতারণার জন্য তাদের অভিযোগ জানাতে পারেন।  এ জন্য তিন স্তরের অভিযোগ পদ্ধতি তৈরি করা হয়েছে।  যার অধীনে জেলা স্তরে জেলা ফোরাম, রাজ্য স্তরে রাজ্য কমিশন এবং জাতীয় স্তরে জাতীয় কমিশন অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

 5. কার্যকর সুরক্ষা - এই আইনের অধীনে, ভোক্তাদের জন্য ভাল নয় এমন সমস্ত কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করার বিধান রয়েছে৷

 6. বিস্তৃত এলাকা - ভোক্তা সুরক্ষা আইনের ক্ষেত্রটি বেশ প্রশস্ত।  এটি সব ধরনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।  যেমন বেসরকারি, সরকারি ও সরকারি ইত্যাদি।


▪ কোনো জিনিস কিনে ঠকে গেলে বা কোনো পরিষেবা কিনে ঠকে গেলে কী করবেন? ; 

▪ কোনো পন্য বা পরিসেবা ক্রয় করে ঠকে গেলে ভোক্তা সুরক্ষা আইনের ধারা 24 এ অনুসারে, অভিযোগকারীকে 2 বছরের মধ্যে মামলা দায়ের করতে হবে, তবে এর পরেও, বিলম্বের কারণ দেখিয়ে মামলা দায়ের করা যেতে পারে।

▪ আপনি ভোক্তা সুরক্ষা আইনের ধারা 12-এর অধীনে অভিযোগ করতে পারেন, আপনি জেলা, রাজ্য বা জাতীয় ভোক্তা ফোরামে আপনি নিজে বা আপনার আইনজীবীর মাধ্যমে এভাবে অভিযোগ করতে পারেন। যথা- 

১) আপনার নাম ও সম্পূর্ণ ঠিকানা।

২) যার বা যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন, তার বা তাদের নাম ও সম্পূর্ণ ঠিকানা। 

৩) জিনিস কেনা ভাড়া নেওয়া পরিষেবা গ্রহণের তারিখ।

৪) দাম হিসেবে দেওয়া টাকার পরিমান।

৫) কেনা বা ভাড়া নেওয়া জিনিসটির বর্ণনা ও তার পরিমাণ পরিমাপ বা পরিষেবার প্রকৃতি।

৬) অভিযোগ কি ধরণের অসাধু ব্যবসা সম্পর্কে ত্রুটিপূর্ণ দ্রব্য সম্পর্কে পরিষেবা ক্ষেত্রে ঘাটতির বিষয় বেশী দাম নেওয়া সম্পর্কে।

৭) মূল্যপত্র বা বিল ভাউচার রসিদ আর এই ব্যাপারে চিঠিপত্র যদি কিছু থাকে।

৮) আপনি কি ধরণের প্রতিবিধান চাইছেন।

▪ মনে রাখবেন: তুচ্ছ কারণে বা হয়রাণি করার উদ্দেশ্যে অভিযোগ দায়ের করলে অভিযোগকারীরই রিমানা হতে পারে। 


▪ কোথায় অভিযোগ করবেন:- 

1986 সালের উপভোক্তা সুরক্ষা আইনে ক্রেতাদের সুরক্ষার জন্য কনজিউমার কোর্ট বা ক্রেতা আদালত গঠন করা হয়। উপভোক্তার ক্ষতির পরিমাণ অনুযায়ী সেটা নির্ধারিত হতো যে তিনি কোন ধরনের কনজিউমার কোর্টে বা আদালতে মামলা করবেন। 20 লক্ষ টাকার কম মূল্যের পণ্যগুলির জন্য, আপনি জেলা ভোক্তা ফোরামে যেতে পারেন এবং 20 লক্ষ টাকার বেশি কিন্তু 1 কোটি টাকার কম মূল্যের পণ্যগুলির জন্য, আপনি রাজ্যের ভোক্তা আদালতে যেতে পারেন এবং পণ্যগুলির জন্য যেতে পারেন। 1 কোটি টাকার বেশি হলে আপনি ভোক্তা আদালতে যেতে পারেন। আপনি জাতীয় ভোক্তা কমিশনের (NCDRC) কাছে অভিযোগ করতে পারেন।

কত দিনে অভিযোগের সমাধান করা যেতে পারে?: 

ভোক্তা সুরক্ষা আইন ধারা 13(3A) অনুযায়ী, বিপরীত পক্ষকে নোটিশ পাওয়ার পর অন্তত 3 মাস এবং সর্বোচ্চ 5 মাসের মধ্যে অভিযোগের সমাধান করা উচিত কিন্তু আপনি জানেন যে এটি হয় ঘটবে না কারণ আদালতে অনেক মামলা বিচারাধীন রয়েছে এবং আদালতের কাজের বিভাগ এমন যে 1 থেকে 3 বছর সময় লাগে।  কিন্তু তারপরও আপনি আপনার মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য এই ধারার অধীনে আদালতে আবেদন করতে পারেন এবং আদালতের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারেন।


▪ ক্রেতা সুরক্ষা আইন বা উপভোক্তা সুরক্ষা আইন ২০১৯ || Consumer Protection Act 2019 In Bengali

▪ 1986 সালের উপভোক্তা সুরক্ষা আইন ২০১৯ সালে বেশ কিছু কারণে সংশোধন করা হয় এবং 2019 সালের উপভোক্তা সুরক্ষা আইনে অনেক নতুন ধারা যুক্ত করা হয়। যেমন- 

১) প্রথমত ক্রেতা অধিকার গুলির সংরক্ষণ এবং বলবৎ করার জন্য ২০১৯ সালের উপভোক্তা সুরক্ষা আইন দ্বারা সেন্ট্রাল কনজিউমার প্রটেকশন অথরিটি (CCPA) গঠন করা হয়। 

২) CCPA- হাতে সেই ক্ষমতা দেওয়া হয় যার দ্বারা কোন উপভোক্তা যদি কোনো পণ্য বা পরিষেবার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানায়,তাহলে সেন্ট্রাল কনজিউমার প্রটেকশন অথরিটি সেই পণ্য বা পরিসেবার বিক্রেতার বিরুদ্ধে তদন্ত করবে। এমনকি CCPA সেই পন্য বা পরিসেবার যাচাইবাছাই করে তা বাতিলও করতে পারে। CCPA এর কাছে পন্য বা পরিসেবার বিরুদ্ধে একজন উপভোক্ত অভিযোগ করতে পারেন কিন্তু কেস বা মামলা করতে পারেন না। মামলা করার জন্য তাকে CDRC এর কাছে যেতে হয়।।

৩) 2019 কনসিউমার প্রটেকশন অ্যাক্টে বিভিন্ন ই-কমার্স ওয়েবসাইট গুলোর উপর বিভিন্ন নিয়ম চালু করা হয়। অনলাইন কোন পণ্য বা পরিষেবা ক্রয় করার ক্ষেত্রে ই-কমার্স ওয়েবসাইট গুলোতে সেই পণ্যের যাবতীয় বিবরণ,বিশেষ করে সেই পণ্য বা পরিসেবা কোন দেশে সেটা অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে,সেই পন্য বা পরিসেবা পরিষেবা ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে, উপভোক্তার অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থা থাকতে হবে। সঙ্গে উপভোক্তাদের অভিযোগ নেওয়া হয়েছে কিনা তা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জানানো এবং এক মাসের মধ্যে সেই অভিযোগের সমাধানের ব্যবস্থা ই-কমার্স ওয়েবসাইট গুলোকে মধ্যে থাকতে হবে।

৪) ২০১৯ সালের উপভোক্তা সুরক্ষা আইনে অনলাইন পণ্য বা পরিসেবার বিজ্ঞাপনের উপর কিছু নিয়ম জারি করা হয়েছে।যেমন বিজ্ঞাপনে যদি কোন একটি প্রোডাক্ট যেভাবে দেখানো হয় সেই প্রোডাক্ট যদি বাস্তবে সেই বিজ্ঞাপনের মত না হয়,তাহলে ধরা হবে সেখানে গ্রাহককে ঠকানো হয়েছে। ফলে উপভোক্তা সেই পন্য বা পরিসেবার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে পারেন।

৫) ২০১৯ সালের উপভোক্তা সুরক্ষা আইনে ভোক্তাদের সেই সুবিধা প্রদান করা হয়েছে, যার মাধ্যমে একজন উপভোক্তা নিজের জায়গা থেকেই যে কোন জায়গার কোম্পানি বা বিক্রেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে পারবেন। ১৯৮৬ সালের উপভোক্তা সুরক্ষা আইনে এই নিয়ম ছিল না।

৬) ১৯৮৬ সালের উপভোক্তা সুরক্ষা আইনে যে কনজিউমার কোর্ট বা ক্রেতা আদালত গঠন করা হয়েছিল,;তা ২০১৯ সালের উপভোক্তা সুরক্ষা আইনের বদল করে Consumer Dispute Redressal Commission-এ বলা করা হয়। 

৭) ২০১৯ সালের উপভোক্তা সুরক্ষা আইনে তিন ধরনের কনজিমার কোর্ট বা ক্রেতা আদালতকে,  ডিস্ট্রিক্ট কমিশন, স্টেট কমিশন এবং ন্যাশনাল কমিশন এই তিন ধরনের কনজিউমার রিড্রেসাল কমিশনে বদল করা হয়।


▪ কোথায় এবং কিভাবে মামলা করতে হবে? 

▪ যদি উপভোক্তার মামলা এমন হয় যেখানে ক্ষতিপূরণের মূল্য ১ কোটি টাকার মধ্যে রয়েছে, তাহলে তাকে প্রথমে ডিস্ট্রিক্ট কমিশনের কাছে কেস করতে হবে। 

▪ যদি দেখা যায় ক্ষতিপূরণের মূল্য এক কোটির বেশি এবং দশ কোটির কম, তাহলে তাকে স্টেট কমিশনের কাছে মামলা বা কেস করতে হবে। 

▪ আর যদি দেখা যায় ক্ষতিপূরণের মূল্য ১০ কোটির বেশি,তাহলে উপভোক্তাকে ন্যাশনাল কমিশনের কাছে কেস করতে পারেন। 

▪ উপভোক্তার মামলা করার পর ৯০ দিনের মধ্যে বা সর্বোচ্চ ১৫০ দিনের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করা হবে। 

▪ যদি কোনো উপভোক্তা ডিস্ট্রিক্ট কমিশনের রায় প্রদানে খুশি না হন বা সন্তোষ না হন,তাহলে তিনি স্টেট কমিশনের কাছে রিপোর্ট করতে পারেন। 

▪ যদি তিনি স্টেট কমিশনের মামলায় খুশি না হন তাহলে তিনি ন্যাশনাল কমিশনের কাছে মামলা করতে পারেন। যদি তিনি ন্যাশনাল কমিশনের রায়েও সন্তুষ্ট না হন,তাহলে তিনি সুপ্রিম কোর্টের কাছে আবেদন করতে পারেন।


Post a Comment

0Comments

Post a Comment (0)