নব্যবঙ্গ বা ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠী সম্পর্কিত সকল প্রশ্নের উওর

Ajit Rajbanshi
0

  

নব্যবঙ্গ বা ইয়ংবেঙ্গল আন্দোলন পিডিএফ ডাউনলোড || নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী সম্পর্কিত প্রশ্ন উওর PDF

দশম শ্রেণির ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা অধ্যায়ে সমাজ সংস্কারের ইতিহাস পর্বে তোমাদের হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও এবং তার নেতৃত্বে চলা নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর আন্দোলন সম্পর্কে পড়তে হবে। তোমাদের যাতে নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর ইতিহাস নিয়ে কোনো সমস্যায় না পড়তে হয় সেই কারণে আজকের এই ব্লগ পোস্টে আমরা 'নব্য বঙ্গ বা ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠী কাদের বলা হত?,,নব্যবঙ্গ আন্দোলন বা ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলন বলতে কী বোঝায়? নবভঙ্গ গোষ্ঠীর আন্দোলন ব্যর্থ হল কেন? এবং নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল বা তাৎপর্য কী ছিল- এই সকল প্রশ্নের উওর শেয়ার করবো।

*** আর তোমরা যদি মাধ্যমিক ইতিহাস সকল অধ্যায়ের সব ধরনের প্রশ্ন উত্তরের পিডিএফ নোট খুবই সামান্য দামে পেতে চাও, তাহলে +৯১৮৩৮৮৯৮৬৭২৭ এই নম্বরে কল করে যোগাযোগ করতে পারো

নব্য বঙ্গ বা ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠী কাদের বলা হত?

উনিশ শতকে কলকাতায় হিন্দু কলেজের তরুন অধ্যাপক হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও এবং তার অনুগামী কয়েকজন ছাত্রকে নিয়ে যে সমাজ সংস্কারক গোষ্ঠীর আবির্ভাব হয়,তাদের বলা হতো নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী বা ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠী। নব্য বঙ্গ গোষ্ঠী গঠিত হয়েছিল ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দের দিকে এবং নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর প্রাণপুরুষ ছিলেন হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও।

নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর কয়েকজন সদস্য ;

নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা বা নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর প্রাণপুরুষ ছিলেন হিন্দু কলেজের তরুণ অধ্যাপক হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও। ডিরোজিও ছাড়ার নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন রাম গোপাল ঘোষ,রামতনু লাহিড়ী,কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়,প্যারীচাঁদ মিত্র, দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায়,রসিককৃষ্ণ মল্লিক প্রমুখ।


নব্যবঙ্গ আন্দোলন বা ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলন বলতে কী বোঝায়?

উনিশ শতকে বাংলার সমাজে থাকা ধর্মীয় অন্ধ বিশ্বাস, বিভিন্ন কূপ্রথা যেমন-জাতিভেদ প্রথা, অস্পৃশ্যতা, বাল্যবিবাহ,সতীদাহ প্রথা, অশিক্ষা ছাড়াও অন্যান্য খারাপ জিনিস গুলো দূর করে বাংলার মানুষকে আধুনিক চিন্তাধারা সম্পন্ন করে তোলার জন্য হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও এবং তার নেতৃত্বে চলা নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী বা বেঙ্গল গোষ্ঠী যে সমাজ সংস্কার মূলক আন্দোলন শুরু করেছিলেন, তাই নব্যবঙ্গ আন্দোলন বা ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলন নামে পরিচিত।। ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলন সমাজের একটি শ্রেণীর মধ্যেই সীমিত ছিল। এই আন্দোলন কলকাতার পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত একজন যুবক, বিশেষ করে হিন্দু কলেজের শিক্ষার্থী যারা হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিওর অনুগামী ছিলেন,তাদের মধ্যেই সীমিত ছিল।

অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন গঠন ও প্রার্থেনন পত্রিকার প্রকাশ

নব্যবঙ্গ আন্দোলন বা ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলন শুরু হয়েছিল অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন, এথিমিয়াম এবং প্রার্থেনন পত্রিকার হাত ধরে।। হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও বাংলা সমাজে চলে আসা বিভিন্ন খারাপ দিকগুলো সম্পর্কে আলোচনা করার জন্য বা তার ভালো-মন্দ বিচার করার জন্য ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে 'অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন' গঠন করেন। এই অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশনে ভিভিয়ান ডিরোজিও এবং নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর সদস্যরা হিন্দু সমাজের বিভিন্ন খারাপ দিক যেমন- জাতিভেদ প্রথা, অস্পৃশ্যতা, বাল্যবিবাহ,সতীদাহ প্রথা, অশিক্ষা ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করতেন। ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠীর মুখপত্র ছিল এথিনিয়াম। এছাড়াও নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী ১৮২৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রার্থেনন নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। এই প্রার্থনরন প্রক্রিয়ায় তারা নিয়মিতভাবে হিন্দু সমাজের খারাপ দিকগুলো সম্পর্কে লেখালেখি প্রকাশ করতেন।।


** দশম শ্রেণির বাংলা,ইতিহাস,ভূগোল,জীবন বিজ্ঞান এবং ভৌত বিজ্ঞানের সম্পূর্ণ সিলেবাসের প্রচুর সংখ্যক প্রশ্ন উত্তরের পিডিএফ নোট খুবই কম দামে পেতে চাও, তাহলে আজই +৯১৮৩৮৮৯৮৬৭২৭ এই নম্বরে কল করে যোগাযোগ করতে পারো


ইয়ংবেঙ্গল আন্দোলন বা নব্যবঙ্গ আন্দোলনের উদ্দেশ্য কী ছিল?

ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলন বা নব্যবঙ্গ আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল হিন্দু সমাজে বিশেষ করে বাংলার সমাজে গভীরভাবে আটকে থাকা বিভিন্ন ধরনের অন্ধবিশ্বাস,কুপ্রথা সহ অন্যান্য খারাপ দিকগুলো সমাজ থেকে দূর করা। ইয়ং বেঙ্গল বা নব্যবঙ্গ আন্দোলনের উদ্দেশ্য গুলি ছিল-
১) প্রথমত বাংলার সমাজের ছড়িয়ে ছিটিয়ে একা বিভিন্ন কূপ্রথা যেমন সতীদাহ প্রথা, বাল্যবিবাহ, বহু বহুবিবাহ, জাতিভেদ প্রথা, অস্পৃশ্যতা, সন্তান বিসর্জন,মূর্তি পূজা এরকম আরো কিছু খারাপ দিকগুলোর বিরুদ্ধে আন্দোলন করে সেগুলো বন্ধ করা।
২) দ্বিতীয়ত সমাজ থেকে অন্ধবিশ্বাস,কূপ্রথা ইত্যাদি দূর করে, সমাজে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটিয়ে সকলের মধ্যে আধুনিক যুক্তিবাদী চিন্তাধারার প্রসার ঘটানো। সমাজ থেকে খারাপ দিক সরিয়ে বিজ্ঞানমনস্ক ও যুক্তিবাদী সমাজ গঠনও নব্যবঙ্গ আন্দোলনের একটা প্রধান উদ্দেশ্য ছিল।
৩) তৃতীয়ত সমাজে নারীদের যাতে যথেষ্ট পরিমাণ স্বাধীনতা থাকে এবং নারী শিক্ষার প্রসার ঘটে, সেজন্যেও তাঁরা পার্থেনন পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখি প্রকাশ করতেন। সুতরাং সমাজে নারী শিক্ষার প্রসার ঘটানোও নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর একটি উল্লেখযোগ্য উদ্দেশ্য ছিল।।


নব্যবঙ্গ আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার কী কারণ ছিল? || নব্যবঙ্গ আন্দোলনের সীমাবদ্ধতা কী ছিল?

নব্য ভঙ্গ আন্দোলন বা ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পেছনে একাধিক কারণ ছিল।
যেমন-

সমর্থনের অভাবে ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলন ব্যর্থ

প্রথমত নব্যবঙ্গ আন্দোলন যেহেতু কলকাতার একটি শ্রেণীর মধ্যে সীমিত ছিল বা এই আন্দোলন সকল স্তরের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল না। নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী শুধুমাত্র বাংলার ধর্মীয় দিকগুলো নিয়েই আন্দোলন করেছিল। এই গোষ্ঠী সমাজের সাধারণ মানুষের জন্য বিশেষ করে কৃষক শ্রমিকদের জন্য কোনো কাজ করার উদ্যোগ নেয়নি বা তাদের নিয়ে তাদের মধ্যে কোনো ভাবনা ছিল না। তাই সাধারণ জনগণের মধ্যে নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর কোনো প্রভাব ছিলনা। সাধারণ জনগণ আন্দোলনে না থাকায় নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী সেরকম কোনো জোরালো আন্দোলন শুরু করতে পারেনি। আর আন্দোলন জোড়ালো হয়নি বলেই নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী সেরকম কোনো উদ্দেশ্য সফল করতে পারেনি।

হিন্দু ধর্মের তীব্র সমালোচনার কারণে আন্দোলন ব্যর্থ ;-

দ্বিতীয়ত নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে বেশিরভাগ ছিলেন হিন্দু। কিন্তু তারা নিজেরা হিন্দু হয়েও মূর্তিপূজা বিশেষ করে হিন্দু দেব-দেবীদের নিয়ে খুব বাজে ভাবে মজা করতেন। নব্য বঙ্গ গোষ্ঠীর সদস্যরাই কালী ঠাকুরকে গুড মর্নিং ম্যাডাম বলে সম্বোধন করতেন। 'আমরা গোমাংস খাই'এরকমও বলতেন। নব্য বঙ্গ গোষ্ঠীর এই ধরনের আচরণ হিন্দু সমাজের সকলকেই তাদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলেছিল। যার ফলে নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর আন্দোলন হিন্দুদের সমর্থন জোগাড় করতে পারেনি। এবং এটা ছিল নব্যবঙ্গ বা ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠীর আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার অন্যতম কারণ।।

ডিরোজিওর মৃত্যুর কারণে আন্দোলন ব্যর্থ ;-

নবব্যঙ্গ গোষ্ঠীর আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার প্রধান কারণ ছিল হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিওর মৃত্যু। ডিরোজিওর মৃত্যুর পর নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর সদস্যরা তাদের আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও ততক্ষণে এই আন্দোলনের যে ভীত ছিল সেটা নড়বড়ে হয়ে গিয়েছিল। ডিরোজিওর মৃত্যুর পর নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর সদস্যরা যে যার মতো নিজের জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লে ধীরে ধীরে নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর আন্দোলন শেষ হয়ে যায়। এবং এই ভাবেই বঙ্গ গোষ্ঠীর আন্দোলন সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছিল।।


নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল বা প্রভাব

নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর আন্দোলন ব্যর্থ হলেও নব্যবঙ্গ আন্দোলনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল বা প্রভাব ছিল। যেমন-
১) নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর সদস্যরাই সর্বপ্রথম হিন্দু সমাজের খারাপ দিকগুলোর বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা করেন।
২) নব্য বঙ্গ আন্দোলনের ফলে ভারতে চলে আসা বহুবিবাহ,বাল্যবিবাহ, বিশেষ করে সতীদাহ প্রথার মত খারাপ কুপ্রথাগুলোর বিরুদ্ধে মানুষের মনে ভাবনা আসতে শুরু করে।
৩) নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী নারী শিক্ষার প্রসারের স্বপক্ষে লেখালেখি প্রকাশ করতো। ফলে তাদের আন্দোলন ব্যর্থ হলেও নব্যবঙ্গ আন্দোলনের ফলে ভারতে নারী শিক্ষা প্রসারের পথ যে প্রশস্ত হয়েছিল তা অস্বীকার করা যায় না।।

** এটাও দেখো👉 : নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর সম্পূর্ণ ইতিহাস

** ক্লিক করো এখানে👉 : মাধ্যমিক ২০২০ ইতিহাস প্রশ্নপত্র

** ক্লিক করো 👉 : ২০১৭ মাধ্যমিক বাংলা প্রশ্নপত্র

*** এটাও পড়ে দেখো👉 : ২০১৭ মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্নপত্রের সমাধান 


Post a Comment

0Comments

Post a Comment (0)