পাবনা কৃষক বিদ্রোহের কারণ এবং ফলাফল

Ajit Rajbanshi
0


causes-and-effects-of-pabna-farmers-revolt-in-bengali


WBBSE Class 10 History / Madhyamik History 3rd Chapter : প্রতিরোধ ও বিদ্রোহের অন্তর্ভুক্ত একটি কৃষক বিদ্রোহ, 'পাবনা কৃষক বিদ্রোহের কারণ এবং ফলাফল' (Causes And Effects Of Pabna Farmers Revolt Of 1870 In Bengali).
সম্পর্কে আজকেই ব্লক পোস্টে তোমরা জানতে পারবে।।

** আরও প্রচুর সংখ্যক প্রশ্ন উওর + সাজেশন পাওয়ার জন্য 👇

▪ জয়েন করতে পারো 👉 Telegram Channel 

▪ ফলো করো আমাদের 👉 Facebook Page 

▪ ফলো করো আমাদের👉 WhatsApp Channel

পাবনা কৃষক বিদ্রোহ কী বা কাকে বলে?

১৮৫৯-৬০ খ্রিস্টাব্দে নীল বিদ্রোহের পর চাষীদের উপর নীলকর সাহেবদের অত্যাচার বন্ধ হলেও,সেইসময় মূলত জমিদার অত্যাচারদের সেরকম ভাবেও কমেনি। ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে নীল বিদ্রোহের পর বর্তমান বাংলাদেশে বা পূর্ববঙ্গের পাবনা জেলায় সাধারণ কৃষকদের উপর জমিদারদের উপর অত্যাচার নতুন করে শুরু করে। জমিদারদের শোষন অত্যাচার থেকে মুক্তি পাওয়ার আশায় পাবনা জেলার কৃষকরা ১৮৭০ এর দিকে যে ভয়ংকর বিদ্রোহ শুরু করেছিল,তাই পাবনা কৃষক বিদ্রোহ নামে পরিচিত।


পাবনা কৃষক বিদ্রোহের কারণ কী ছিল?

১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে এই পাবনা বিদ্রোহের কারণ ছিল একাধিক। পাবনা জেলার জমিদাররা কৃষকদের উপর যে সমস্ত অত্যাচার করতো,সেই শোষন - অত্যাচার থেকে মুক্তি পাওয়াই ছিল পাবনা কৃষক বিদ্রোহীদের প্রধান লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য। মূলত যে সমস্ত কারণে পাবনা কৃষক বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল, তার মধ্যে অন্যতম ছিল -

প্রথমতঃ ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে নীল বিদ্রোহের সময় ব্রিটিশ সরকার দশম আইন পাশ করেছিল। দশম আইনে হয়েছিল যে কৃষককে তার নিজের জমির মালিকানা ও পাট্টা দেওয়া হবে। কিন্তু সরকারের এই আইন ঘোষণা হওয়ার পরেও,সেখানকার জমিদাররা সরকারের আইন ফাকি দিয়ে কৃষকদের জমি থেকে উচ্ছেদ করায় পাবনার কৃষকরা জমিদারদের উপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। এছাড়াও কৃষকের উপর যে উচ্চহারে খাজনা বসানো হতো,সেই খাজনা না দিতে পারলেই খাজনা না দেওয়ার অজুহাতে কৃষকের জমি থেকে উচ্ছেদ করা হতো।

দ্বিতীয়তঃ পাবনায় যে সমস্ত জমি গুলো  কৃষকদের অধিকারে ছিল,সেই জমিতে অধিক মুনাফা লাভের আশায় জমিদাররা সেসব জমিতে বিভিন্ন ধরনের নতুন নতুন কর এবং উপকর বসাতে শুরু করে। যার বলে খাজনার পরিমাণ বেড়ে যেত অনেক। সেই খাজনা মেটাতে গিয়ে কৃষকদের বিপুল পরিমাণ আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো।

তৃতীয়তঃ এছাড়া কৃষকদের কম পরিমাণ জমি থেকে অধিক পরিমাণ খাজনা আদায় করার উদ্দেশ্যে জমির মাপেও কারচুপি করা হতো। জমিদাররা কম পরিমাণ জমিকে ভুল মাপের সাহায্যে বেশি পরিমাণ জমি হিসেবে দেখাতো। যার ফলে কম পরিমাণ জমিতেই কৃষককে অধিক পরিমাণ খাজনা দিতে হতো।

চতুর্থতঃ পাবনা কৃষকদের অর্থনীতিতে পাট ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দের আগে বাজারের পাটের মূল্য ছিল অনেকটাই ভালো। ফলে পাট বিক্রি করে পাবনার কৃষকরা অনেকটাই মুনাফা করতে পারতো। কিন্তু ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দের পরে বাজারে পাটের মূল্য খুব বাজে ভাবে কমে যায়। যার ফলে কৃষকদের আর্থিক দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্থ হতে হয়। এই পরিস্থিতিতে পাবনার কৃষকদের উপর যে পরিমাণ করের বোঝা ছিল,সেই কর মুকুব করার দাবি তারা জমিদারদের কাছে করে। কিন্তু জমিদাররা তাদের  খাজনা মুকুব করতে রাজি হয় না এবং তাতেই পাবনা কৃষক বিদ্রোহের সূচনা হয়।


পাবনা কৃষক বিদ্রোহের নেতা কে ছিলেন? 

পাবনা কৃষক বিদ্রোহের অন্যতম নেতা ছিলেন ঈশান চন্দ্র রায়, যিনি বিদ্রোহী রাজা নামে পরিচিত ছিলেন।  তবে ঈশান চন্দ্র রায় ছাড়াও কুদির মোল্লা ও শম্ভুনাথ পালের মতো নেতারা নিজেদের এলাকায় নেতৃত্ব দানের মাধ্যমে সেখানে জমিদারদের শোষণ অত্যাচার থামাতে চেয়েছিলেন। ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে পাবনার কৃষকরা বিদ্রোহের দিকে প্রথম পা বাড়িয়েছিল এবং ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে পাবনা কৃষক বিদ্রোহ অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে ওঠে। পাবনার কৃষকরা জমিদারদের বেআইনি কোনো খাজনা দেবে না বলে ঘোষণা করে,তারা ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে "দি পাবনা" রায়ত লিগ গঠন করে। বিদ্রোহীরা জমিদারদের লেঠেল বাহিনীর মোকাবিলা করার জন্য তারা একটি সেনাবাহিনী অথবা বিদ্রোহী বাহিনীও গঠন করেন।


পাবনা কৃষক বিদ্রোহ কোথায় হয়েছিল? 

পাবনা কৃষক বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল সর্বপ্রথম পাবনার ইউসুফশাহী পরগনায়। পাবনা কৃষক বিদ্রোহের প্রধান কেন্দ্র ছিল ইউসুফশাহী ইউসুফশাসী। ইউসুফশাহী পরগনা থেকে শুরু হওয়ার পর সমগ্র পাবনা জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে এবং ঢাকা,ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, বাখরগঞ্জ, রাজশাহী প্রভৃতি অঞ্চলে ছড়িয়ে পরে। পাবনা কৃষক বিদ্রোহ খুব অল্প সময়ের মধ্যেই খুব তীব্র হয়ে উঠেছিল। পাবনা কৃষক বিদ্রোহের নানা ঘটনার কথা, সেই সময়ের নামকরা কিছু পত্রিকা বা সংবাদপত্র যেমন.- গ্রামবার্তা প্রকাশিকা, হিন্দু হিতৈষণী, সহচর প্রভৃতি পত্রিকায় প্রকাশিত। মূলত গ্রামবার্তা প্রকাশিকা, হিন্দু হিতৈষণী, সহচর প্রভৃতি পত্রিকাতেই পাবনা কৃষক বিদ্রোহের খবর প্রকাশিত হয়।


পাবনা কৃষক বিদ্রোহের ফলাফল : 

পাবনা বিদ্রোহ সেরকম শেষপর্যন্ত পুলিশের তীব্র দমন নীতির চাপে পরে শেষপর্যন্ত ব্যর্থ হয়। তাই পাবনা কৃষক বিদ্রোহের সেরকম ভাবেও কোনো গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল লক্ষ্য করা যায়নি।

তবে একেবারেই যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল দেখা যায়নি সেটা নয়। পাবনা কৃষক বিদ্রোহীদের অন্যতম দাবী ছিল ১৮৫৯ খ্রিস্টানদের প্রজাস্বত্ব আইনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত প্রজাস্বত্ব অক্ষুন্ন রাখা। তাই প্রজাস্বত্ব রক্ষার জন্য ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন পাশ করা হয়।


এটাও দেখো👉 : মাধ্যমিক ইতিহাস মকটেস্ট

** এটাও পড়তে পারো : ভারতের সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা

এটা দেখো👉 : মাধ্যমিক ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ 50+ MCQ প্রশ্ন উওর

** ক্লিক করো👉 : নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর সম্পূর্ণ ইতিহাস 


Post a Comment

0Comments

Post a Comment (0)