সহজ ভাষায় সাম্য এবং স্বাধীনতার সম্পর্ক

Ajit Rajbanshi
0

  

relation-between-equality-and-liberty-in-bengali

ভূমিকা : যদি আমরা আদর্শ সমাজকে একটি কয়েন হিসেবে দেখি তাহলে সাম্য এবং স্বাধীনতা হলো সেই কয়েনের দুটি গুরুত্বপূর্ণ ভিন্ন দিক। যেখানে একটি দিক না থাকলে সেই কয়েনটি কখনোই সম্পূর্ণ হতে পারে না। একটি আদর্শ সমাজে সাম্য এবং স্বাধীনতা উভয়ই প্রয়োজন। সঠিক সমাজ গঠন এবং ব্যক্তির সর্বাঙ্গীন বিকাশের ক্ষেত্রে সাম্য এবং স্বাধীনতা প্রয়োজন। সাম্য এবং স্বাধীনতা হলো খুবই গভীরভাবে সম্পর্কিত দুটি জিনিস। সাম্য এবং স্বাধীনতার মধ্যে ঠিক কী সম্পর্ক রয়েছে,সেটা আমরা তখনই বুঝবো যখন আমাদের মধ্যে সাম্য এবং স্বাধীনতার ধারণা থাকবে।

খুব সাধারণ অর্থে সাম্য বলতে আমরা বুঝি জাতি, ধর্ম, বর্ণ, স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলকে সমান সুযোগ সুবিধা প্রদান করা। 

অপরদিকে "অন্যের বিকাশের পথে বাধা না হয়ে দাঁড়িয়ে বা অন্যের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ না করে নিজের ইচ্ছে মত কাজ করার অধিকার হলো স্বাধীনতা। 


সাম্য এবং স্বাধীনতার মধ্যে সম্পর্ক || Relation Between Equality And Liberty

এই সাম্য এবং স্বাধীনতার মধ্যে কী সম্পর্ক রয়েছে তা নিম্নলিখিত ভাবে আলোচনা করা হলো। 

▪ সাম্য ছাড়া স্বাধীনতা থাকতে পারে না ; 

▪ জা জ্যাক রুশো বলেছিলেন- "Liberty cannot exist without equality.” অর্থাৎ সাম্য ছাড়া স্বাধীনতা থাকতে পারে না।।

যদি সমাজে সকলের সমান অধিকার হিসাবে সাম্য না থাকে, কারোর কম অধিকার কারোর বেশি অধিকার এরুপ থাকে, তাহলে সেখানে একজনের দ্বারা অপরজন অত্যাচারিত বা নিয়ন্ত্রিত হতে পারে। কিন্তু সমাজে যদি সাম্য প্রতিষ্ঠিত হয় তাহলে সেখানে সকলে সমান থাকবে। আর একমাএ বৈষম্যহীন সমাজেই স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। 

▪ সাম্য- স্বাধীনতার মূল ভিত্তি ; 

▪ যদি সমাজে সামাজিক,রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক প্রভৃতি ক্ষেত্রে সাম্য না থাকে অর্থাৎ প্রতিটি ব্যক্তির সমান অধিকার না থাকে, তাহলে সেখানে কখনোই সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক প্রভৃতি স্বাধীনতাও থাকতে পারে না। তাই বলা চলে সাম্যই হলো স্বাধীনতার মূল ভিত্তি বা মূল শর্ত।

উদাহরণ হিসাবে ; স্বাধীনতার আগে ভারতীয়দের সাম্য ছিল না, তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভারতীয়দের স্বাধীনতাও ছিলোনা 

▪ সাম্য ছাড়া স্বাধীনতা অর্থহীন ; 

▪ সাম্য হিসাবে যদি সকলে যদি সমান সুযোগ সুবিধা ভোগের সুযোগ না পায়, তাহলে সেই সমাজে স্বাধীনতা থাকলেও তা মূলত অর্থহীন হয়ে পড়বে। উদাহরণ হিসাবে- ভারত স্বাধীন হওয়ার আগেও কিছুমাত্র ভারতীয়দের ভোট দানের স্বাধীনতা ছিলো। কিন্তু তখন সেখানে সাম্য না থাকায় সেই স্বাধীনতা ছিলো অর্থহীন। 

▪ সাম্য ও স্বাধীনতা হলো পরস্পর পরিপূরক ; 

▪ সাম্য বলতে আমরা বুঝি সমাজে সকলে সমান অধিকার বা সমান সুযোগ সুবিধা থাকবে। আর যখন সমাজে সকলের সমান অধিকার বা সুযোগ থাকবে, তখনই সেখানে প্রত্যেকে সমানভাবে কাজ করার অধিকার পাবে। অর্থাৎ সকলে স্বাধীনতা ভোগ করবে। তাই বলা যায় যে, সাম্য ও স্বাধীনতা হলো পরস্পর বিরোধী নয় বরং পরস্পর পরিপূরক।

 ▪ সাম্য ও স্বাধীনতার লক্ষ্য এক ও অভিন্ন ;

সাম্য ও স্বাধীনতার লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য বলতে গেলে একই। সমাজে সাম্য ও স্বাধীনতা থাকলেই একজন ব্যক্তির সর্বাঙ্গিক বিকাশ ঘটতে পারে। সাম্য হল সেই জিনিস যা সকলকে সমান সুযোগ সুবিধা দেওয়ার মাধ্যমে সবার মধ্যে ঐক্য স্থাপন করে। আর ঐক্য না থাকলে কোনাে উন্নয়ন সম্ভবপর নয়। তাই উন্নয়নের জন্য সাম্য প্রয়োজন। অপরদিকে ব্যক্তির স্বাধীনতা হলো সেই জিনিস যার মাধ্যমে ব্যক্তি নিজের আত্ম বিকাশের ক্ষেত্র সৃষ্টি করতে পারে এবং তার মাধ্যমে ব্যক্তির কল্যাণ ঘটতে পারে। 

▪ সাম্য ও স্বাধীনতা গণতন্ত্রের ভিত্তি ;

▪ সাম্য ও স্বাধীনতা উভয়েই গণতন্ত্রের ভিত্তি। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় স্বাধীনতার যেমন প্রয়ােজন, সাম্যেরও তেমনি প্রয়ােজন। স্বাধীনতা যেমন করে নাগরিকদের মতামত প্রকাশে সাহায্য করে, তেমন ধনী-গরিবের ভেদাভেদ দূর করে সকলকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অংশ হওয়ার সুযোগ করে দেয় সাম্য। সুতরাং সাম্য ও স্বাধীনতা পরস্পর ঘনিষ্ঠ ও সম্পর্কযুক্ত।

▪ সাম্য ও স্বাধীনতা ছাড়া রাষ্ট্র অচল ;

▪ সাম্য ও স্বাধীনতা না থাকলে রাষ্ট্র অচল হয়ে পড়ে। এর প্রমাণ আমরা যেকোনাে দেশের সংকটময় মুহূর্তে দেখতে পাই। সাম্য ও স্বাধীনতার পরিপূর্ণ সমন্বয় না থাকার জন্য সেখানে রাষ্ট্র অচল হয়ে পড়ে, এই কথা নিশ্চিন্তে বলা যায়।

▪ সাম্য ও স্বাধীনতা সমাজের শান্তি শৃঙ্খলা প্রদান করে ;

▪ সাম্য ও স্বাধীনতা ছাড়া কোনাে সমাজে শান্তি ও শৃঙ্খলা বিরাজ করা সম্ভবপর নয়। যে সমাজে সাম্য ও স্বাধীনতা বিদ্যমান নেই যেখানে শান্তি-শৃঙ্খলা নেই। তাই সাম্য ও স্বাধীনতাকে সমাজের শান্তি ও শৃঙ্খলার মূল নিয়ামক বলে গণ্য করা হয়।

▪ উপসংহার ; পরিশেষে বলা যায় যে, স্বাধীনতাকে বুঝতে হলে সাম্যকে বুঝতে হবে। আবার সাম্যকে বুঝতে হলে স্বাধীনতা সম্পর্কে জানতে হবে। কাজেই সাম্য ও স্বাধীনতার মধ্যে যতই বিরােধ থাকুক না কেন, উভয়ের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। 

এখানে ক্লিক করো ; আদর্শবাদী দৃষ্টিভঙ্গির উপর নোট

আরও পড়ো👉 : রাষ্ট্রের কিছু সহজ সংজ্ঞা এবং বৈশিষ্ট্য

এটা পড়ো👉 : রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠের 6টি উল্লেখযোগ্য প্রয়োজনীতা

এটাও পড়ো👉 : রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কিত বিবর্তনমূলক বা ঐতিহাসিক মতবাদ

Post a Comment

0Comments

Post a Comment (0)