জানুন গার্হস্থ্য বা পারিবারিক হিংসা আইন (Domestic Violence Act 2005) সম্পর্কে বিস্তারিত

Ajit Rajbanshi
0

  

domestic-violence-act-2005

পারিবারিক হিংসা বা গার্হস্থ্য হিংসা বলতে কী বোঝায়?

▪ যদি কোনো পুরুষ বা তার পরিবারের কোনো সদস্যদের দ্বারা কোনো মহিলা যার সাথে সেই পুরুষের সম্পর্ক রয়েছে বা সম্পর্ক ছিল, তার যদি শারীরিক,মানসিক বা অর্থনৈতিক ক্ষতি করা হয়ে থাকে বা ক্ষতি করার চেষ্টা করা হয়ে থাকে তাহলে সেটাকে গার্হস্থ্য হিংসা বা পারিবারিক হিংসা ( Domestic Violence) হিসেবে ধরা হবে। 

▪ এখানে একটা কথা বলে রাখা ভালো যে যৌতুক বা অন্য কোনো ধরনের সম্পত্তির জন্য মহিলার ওপর বা তার পরিবারের অন্য কোন সদস্য বা আত্মীয়দের উপর শারীরিক বা মানসিক অত্যাচার বা তাদের হেনস্থা করাও গার্হস্থ্য হিংসার মধ্যে পড়বে।

▪ নিম্নলিখিত কাজ গুলো যদি করা হয় তাহলে ধরে নেওয়া হবে যে মহিলার শারীরিক ক্ষতি করা হয়েছে। তখন সেটা গার্হস্থ্য হিংসার মধ্যে পড়বে। ;- 

১) মহিলার উপর যেকোনো ধরনের শারীরিক কষ্ট দেওয়া, 

২) এমন যেকোনো কাজ করা যার জন্য মহিলার জীবন, স্বাস্থ্য, শরীর, অঙ্গের ক্ষতি হবে বা ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে।

৩) এমন কোনো কাজ করা যার জন্য তার স্বাস্থ্য বা বিকাশের ক্ষতি হবে।

৪) মহিলার অনিচ্ছা সত্ত্বেও তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করা হলে,

৪) শারীরিক আক্রমণ বা বলপ্রয়োগ করা হলে তা গার্হস্থ্য হিংসার মধ্যে পড়বে।।

▪ মানসিক ক্ষতির মধ্যে পড়বে ;- 

১) কোনো ভাবে মহিলাকে অপমান বা অপদস্ত করা হলে, 

২) মহিলার নামে কোনো অপবাদ, টিটকিরি করা হলে, 

৩) কোনো ধরনের উপহাস, বাজে ভাষা প্রয়োগ করা, ছেলে সন্তান না দিতে পারার জন্য বাজে কথা শোনানো,

৪) এমন কোনো ব্যক্তিকে শারীরিক ক্ষতি করার হুমকি দেওয়া যার সাথে সেই মহিলার কোনো ধরনের সমন্ধ বা সম্পর্ক রয়েছে, তা হলে তখন ধরে নেওয়া হবে যে তা মহিলার মানসিক ক্ষতি হয়েছে । ফলে সেটাও গার্হস্থ্য হিংসার মধ্যে পড়বে।।

▪ মহিলার অর্থনৈতিক ক্ষতির ক্ষেত্রে ;-.

১) এমন যেকোনো সম্পত্তি যেটা মহিলা পরম্পরাগত ভাবে বা আইনি ভাবে দাবীদার, সেই সম্পত্তি যদি তাকে ব্যবহার করতে না দেওয়া হয়, 

২) মহিলা এবং তার বাচ্চার প্রয়োজনীয় বা আবশ্যিক চাহিদা গুলো যদি পূরণ না করা হয়, 

৩) স্ত্রীধন, মলিহার নিজস্ব অর্জিত সম্পদ বা স্বামী থেকে প্রাপ্ত সম্পদ যদি তাকে ব্যবহারে বাধা দেওয়া হয়, 

৪) সম্পত্তি, মূল্যবান বস্তু, শেয়ার বা অন্য কোনো সম্পত্তি যেখানে মহিলার অধিকার বা ভাগ রয়েছে, সেটা তার বিনা অনুমতিতে বা জোড় করা বিক্রি করা হলে, ভাড়া এবং রক্ষণাবেক্ষণ থেকে যদি তার কোনো অর্থ আসে, সেটা ব্যবহার করা থেকে তাকে বাধা দেওয়া/ বঞ্চিত করা হলে,

৫) মহিলার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা বা অন্য কাউকে দেওয়া বা মহিলার সম্পত্তি ব্যবহারে বাধা দেওয়া হলে ধরে নেওয়া হবে মহিলার আর্থিক ক্ষতি করা হয়ে। ফলে সেটাকে গার্হস্থ্য হিংসা হিসাবে ধরা হবে।

What Is Domestic Violence Act? || গার্হস্থ্য হিংসা বা পারিবারিক হিংসা প্রতিরোধ আইন 2005 কী?

মহিলাদের উপর হওয়া সমস্ত ধরনের ঘরোয়া অত্যাচার বা পারিবারিক হিংসার হাত থেকে মহিলাদের রক্ষা করার জন্য ২০০৫ সালে ভারতে পাশ হয়েছিল পারিবারিক হিংসা প্রতিরোধ আইন বা গার্হস্থ্য হিংসা প্রতিরোধ আইন বা যেটাকে ইংরেজিতে বলা হয় Protection Of Woman From Domestic Violence Act 2005.

পারিবারিক হিংসার ক্ষেত্রে কার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা যাবে? 

▪ Protection of women from domestic violence আইনের অধীনে একজন মহিলা সেই পুরুষের থেকে ত্রান / মুক্তি / নিস্তার চাইতে পারেন যার সাথে সেই মহিলার ঘরোয়া সম্পর্ক ছিল। 

▪ এই আইনের অধীনে একজন মহিলা শুধুমাত্র একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের বিরুদ্ধেই মামলা করতে পারেন যার সাথে তার বিয়ের আগে বা পরে ঘরোয়া সম্পর্ক ছিলো। 

▪ বিয়ে হয়নি তবুও ঘরোয়া সম্পর্ক রয়েছে বা স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক রয়েছে, তাহলে সেক্ষেত্রে সেই মহিলাও সেই পুরুষের বিরুদ্ধে এই আইনের অধীনে মামলা করতে পারবেন।

ঘরোয়া হিংসার বা পারিবারিক হিংসার ক্ষেত্রে কার কাছে অভিযোগ করা যাবে? 

▪ প্রোটেকশন অফিসারের কাছে অত্যাচারিতা নিজে বা অন্য যেকেউ অভিযোগ করতে পারে। 

▪ যাদের কাছে মহিলারা সাহায্য পাবেন ; 

▪ Protection Officer ;  রাজ্যে সরকার প্রতিটি জেলায় প্রোটেকশন অফিসার নিয়োগ করা থাকে। প্রোটেকশন অফিসারদের কাজ হলো পীড়িত মহিলাকে এই আইনের সমস্ত ধরনের সুবিধা প্রদান করা। যেমন দ্রুত চিকিৎসা, দ্রুত সহায়তা ইত্যাদি। 

(রাজ্য সরকার প্রতিটি জেলায় প্রয়োজনমতো প্রোটেকশন অফিসার নিয়োগ করে। প্রোটেকশন অফিসার নিয়োগের ক্ষেত্রে চেষ্টা করা হয় যাতে প্রোটেকশন অফিসার একজন মহিলা হন।)

▪ ইনসিডেন্ট রিপোর্ট কী ?

▪ ভিক্টিম বা তার পরিবারের তরফ থেকে ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের অভিযোগ পাওয়ার পর কমিশন অফ ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের প্রোটেকশন অফিসার যে রিপোর্টটি তৈরি করেন, সেটিই ইনসিডেন্ট রিপোর্ট হিসেবে গণ্য হয়। এক্ষেত্রে পুরো ঘটনার তদন্ত করে একটি রিপোর্ট তৈরি করা হয়।

▪ Police Officer ; এই আইনের অধীনে প্রতিটি থানার থানাধ্যক্ষকে, পীড়িত মহিলাকে সমস্ত ধরনের সুবিধা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। 

▪ বেসরকারি সংস্থা ; এই আইনের অধীনে রাজ্য সরকার কিছু বেসরকারি সংস্থাদের সেবা প্রদানকারী হিসাবে বেছে নেয় যাদের কাজ থাকে পীড়িত মহিলাদের সাহায্য করা এবং বিনামূল্যে আইনি সহায়তা দেওয়া।।

▪ ম্যাজিস্ট্রেট / জজ ; অনেক সময় জজ / ম্যাজিস্ট্রেট নিজেও এই আইনের অধীনে পীড়িত মহিলাদের সাহায্য করার জন্য কাজ করতে পারেন।

▪ পারিবারিক হিংসা আইনে কখন, কিভাবে অভিযোগ করা যাবে? ; 

▪ গার্হস্থ্য হিংসা হওয়ার সময়, হওয়ার পরে এবং হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হলে মহিলা লিখিতভাবে, ফোনের মাধ্যমে এবং ইমেইলের মাধ্যমে অভিযোগ জানাতে পারেন।।

▪ অভিযোগ পাওয়ার পর জেলার প্রোটেকশন অফিসার আইন অনুসারে সেই মহিলার সহায়তা করবেন।

▪ Domestic Violence Act 2005- এ কী কী বিচার পাওয়া যাবে?

▪ গার্হস্থ্য হিংসা থেকে মহিলাদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য ২০০৫ সালে প্রোটেকশন অফ ওমেন ফ্রম ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স অ্যাট পাশ হয়। এই আইনটি কার্যকর হয় ২০০৬ সালে। ২০০৬ সালে কার্যকর হওয়া সেই আইনের অনেক ধারা ছিলো। তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ধারা হলো- 

▪ ধারা ২০ ; তে বলা হয়েছে পীড়িত মহিলা ও তার বাচ্চার প্রয়োজন অনুসারে খরচ এবং ক্ষতিপূরণের জন্য ম্যাজিস্ট্রেট অভিযুক্তকে বা তার স্বামীকে আদেশ দিতে পারে। যেমন চিকিৎসার খরচ। 

▪ ধারা ২১ এ বলা হয়েছে পীড়িত মহিলা বা তার পক্ষ থেকে আবেদনকারী ব্যক্তিকে বাচ্চার হেফাজতের বা রক্ষণাবেক্ষণের বা দায়িত্ব নেওয়ার আদেশ ম্যাজিস্ট্রেট দিতে পারে। আবার ; ম্যাজিস্ট্রেট যদি মনে করেন যে অভিযুক্ত ব্যক্তির যেকোনো সাক্ষাৎকার বাচ্চার জন্য ক্ষতিকর তাহলে ম্যাজিস্ট্রেট অভিযুক্ত ব্যক্তির বাচ্চার সাথে যেকোনো সাক্ষাৎকারে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে। 

▪ ধারা ২২ এ বলা হয়েছে, ম্যাজিস্ট্রেট পীড়িত মহিলার সাথে করা যেকোনো প্রকারের গার্হস্থ্য হিংসার জন্য ক্ষতিপূরণ স্বরূপ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আদেশ দিতে পারেন। 


Post a Comment

0Comments

Post a Comment (0)